■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার, আশুলিয়া এবং গাজীপুরে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এই সময়কালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে কিছু কার্যাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোতে চলে গেছে।
শনিবার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে চীন থেকে ৩ দশমিক ৬, ভিয়েতনাম থেকে ৫ দশমিক ২, ভারত থেকে ৭ দশমিক ৬ এবং কম্বোডিয়া থেকে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ আমদানি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।’
তিনি জানান, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ইউরোপে আমদানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
অন্যদিকে ভারত থেকে ৫ দশমিক ১৮, কম্বোডিয়া ১৮ দশমিক ৩৫ ও ভিয়েতনাম থেকে ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ আমদানি বেড়েছে ইউরোপের বাজারে।
এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল ইসলাম একইসঙ্গে বলেন, দেশের পোশাক শিল্প চ্যালেঞ্জিং সময় পেরিয়ে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের পোশাক খাত ক্রেতাদের আস্থা ফিরে পাচ্ছে।
পোশাক শিল্প মালিকদের এই সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘সরকার, মালিক, শ্রমিক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে বিজিএমইএ বোর্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পোশাক কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। পোশাক শিল্পসমৃদ্ধ এলাকায় নিয়মিত টহল দেয়া হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর সহায়তায় বিজিএমইএ কমিউনিটি পুলিশিং শুরু করেছে।’
পোশাক কারখানার আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম জানান, বিজিএমই নেতারা অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিজিএমইএর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধের সুবিধার্থে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে না পারলেও অনেক কারখানা এখনও ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানা সেপ্টেম্বর মাসের বেতন দিতে পারছে না। এসব কারখানার বেতন পরিশোধ নিশ্চিত করতে সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ।
এ ছাড়া পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিকের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গত ১৬ অক্টোবর এই উদ্যোগের উদ্বোধন করেছেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিজিএমইএ’র অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক কারখানার স্টিলের কাঠামোর জন্য অগ্নি প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ধারণের শর্ত শিথিল করা হয়েছে।