■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি চন্দন দাস ও রিপন দাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে ভৈরব থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে চন্দন ও রিপনকে আনোয়ারা উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
চট্টগ্রাম বান্ডেল রোডের সেবক কলোনির মেথরপট্টি এলাকার বাসিন্দা চন্দন। বর্তমানে চন্দনকে ভৈরব থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
রিপন দাস চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার হরেশ চন্দ্র মুন্সেফ লেইনের মৃদুল দাসের ছেলে।
হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ ও দুটি ছবিতে দেখা যায়, লাল হেলমেট, নীল টি-শার্ট ও জিন্স পরা বটি হাতে রিপন আইনজীবী আলিফকে কোপাচ্ছেন।
ভৈরব মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার পর মামলা হলে প্রধান আসামি চন্দনকে ধরতে চট্টগ্রাম ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) গত দুই দিন ধরে ভৈরবে অবস্থান করছিল। ডিবি জানতে পারে আসামি চন্দনের শ্বশুরবাড়ি ভৈরব এলাকায়। কিন্তু ডিবি তার খোঁজ পাচ্ছিল না।
ওসি বলেন, বুধবার ডিবি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে তিনি ভৈরবে অবস্থান করছেন। পরে এ খবর আমাদের জানানো হলে পুলিশ সন্ধ্যার পর থেকে ভৈরব রেলস্টেশনে অবস্থান নেয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁকে রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ওসি আরও বলেন, চন্দন ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভৈরব রেলস্টেশনে নামেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ভৈরবের মেথরপট্টিতে। ট্রেন থেকে নেমে তিনি স্টেশনে ঘোরাঘুরি করে পানির ট্যাংকের কাছে চলে যান। শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসে ওই জায়গা থেকে তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ইচ্ছা ছিল রাত গভীর হলে শ্বশুরের বাসায় আশ্রয় নেবেন। এরই মধ্যে আমরা তাঁকে গ্রেফতার করি। বর্তমানে থানা হেফাজতে তাঁকে রাখা হয়েছে। গ্রেফতারের বিষয়টি চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে এলেই তাঁকে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় বিএনপির সাবেক এক নেতার দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করা হয় গত ২৬ নভেম্বর। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তাঁরা এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া তিনটি মামলা নথিভুক্ত করে পুলিশ।
মদ খাইয়ে দিয়ে এক ব্যক্তি সাইফুলকে মারতে বলেন
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি চন্দন দাস জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাকে এক বোতল মদ খাইয়ে দিয়ে এক ব্যক্তি সাইফুলকে মারতে বলেন। সাইফুলকে মারার জন্য ওই যুবক তাকে বারবার পেছন থেকে ধাক্কা দিতে থাকেন। তবে কে তাকে এগিয়ে দিয়েছেন তা তিনি নিশ্চিত করেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে বুধবার মধ্যরাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় আনা হয়। আগামীকাল শুক্রবার তাকে আদালতে তোলা হবে।
হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ ও দুটি ছবিতে দেখা যায়, সিলভার রঙের হেলমেট, কমলা রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা রামদা হাতে চন্দন দাস এবং লাল হেলমেট, নীল টি-শার্ট ও জিন্স পরা বটি হাতে রিপন আইনজীবী আলিফকে কোপাচ্ছেন। চন্দন দাস নগরীর কোতোয়ালী থানার বান্ডেল সেবক কলোনীর মৃত ধারীর ছেলে। তবে রিপনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম বলেন, ‘চন্দনকে চট্টগ্রামে আনা হয়েছে। তাকে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হবে।’
হত্যা মামলার তদন্তে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চন্দন জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ঝাড়ু নিয়ে তিনি সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কাজে যাওয়া জন্য বের হন। তখন তাকে এক বোতল মদ খাইয়ে দিয়ে এক ব্যক্তি আইনজীবী সাইফুলকে মারতে বলেন।