■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
চলতি বছরের আট মাসে সারাদেশে বজ্রপাতে ২৯৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে শুধু কৃষি কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫২ জন কৃষক।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট মাসের ব্যবধানে বজ্রপাতে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে সেভ দ্যা সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম (এসএসটিএএফ)।
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সংগঠনটির সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশিম মোল্লা, গবেষণা সেলের প্রধান নির্বাহী আবদুল আলীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম জানায়, দেশের জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনের স্ক্রল থেকে বজ্রপাতে হতাহতের সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মারা গেছে মে ৯৬, জুনে ৭৭, সেপ্টেম্বর ৪৭, এপ্রিল ৩১, জুলাই ১৯, আগস্ট ১৭, মার্চ ৯ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ১ জন মৃত্যু হয়েছে।
সংগঠনটি জানায়, এ বছরের ৮ মাসে শুধু কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১৫২ জন কৃষকের। এছাড়া গরু আনতে গিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, মাছ ধরার সময় ৫২ জেলের মৃত্যু হয়েছে। আম কুড়ানোর সময় ১১ জন, ফাঁকা রাস্তায় চলাচলের সময় ১৫, ঘরে থাকাকালীন ২৭, পাথর উত্তোলনের সময় ৩, বাড়ির আঙ্গিনায় খেলার সময় ১৪ শিশু-কিশোর ও গাড়িতে থাকাকালীন ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ বছর সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৩ জন, ফেনী ১২, কক্সবাজারে ১০, জয়পুরহাটে ১৩, হবিগঞ্জে ১৩ এবং গাইবান্ধায় ১০ জন। ধান কাটা, ঘাস কাটা, গরু আনা ও নানান ধরনের কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সংগঠনটি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১১ শিশু ও ৫৫ জন নারী রয়েছে। নারীর মধ্যে ৬ জন কিশোরী। এছাড়া, মোট মৃত্যুর মধ্যে ২৪২ জনই পুরুষ। পুরুষের মধ্যে কিশোরের সংখ্যা ১৭ জন। এছাড়া এই আট মাসে বজ্রাঘাতে আহত হয়েছেন আরও ৭৩ জন মানুষ।
সংগঠনটি আরও জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রপাতে মারা গেছে ১ জন। মার্চ মাসে মারা হয়েছে ৯ জন। এর মধ্যে ৮ জন পরুষ ও ১ নারী রয়েছে। মার্চে আহত হয়েছেন ৬ জন। এর মধ্যে ৬ জনই পুরুষ। এপ্রিল মাসে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১১ নারী ও ১ শিশু এবং ২ জন কিশোরী রয়েছে। এপ্রিলে আহত হয়েছেন ১ জন পুরুষ। মে মাসে মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ জন, নারী ১৭, শিশু ২ এবং কিশোর ২ ও কিশোরী ১ জন। মে মাসে ২৮ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে পুরুষ ২৩, নারী রয়েছে ৫ জন। জুন মাসে মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ৬১ জন, নারী ১৬ জন, শিশু ৫, পুরুষের মধ্যে কিশোর রয়েছে ৭ জন। এ মাসে আহত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২, নারী ২ জন।
জুলাই মাসে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এর মধ্যে নারী ১ এবং ১৮ জনই পুরুষ। এ মাসে আহত হয়েছে ১০ জন। এর মধ্যে ১ জন নারী এবং ৯ জনই পুরুষ রয়েছে। আগস্টে বজ্রপাতে মোট ১৭ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ৩ জন নারী ও ১৪ জন পুরুষ। এর মধ্যে ১ শিশু, ১ কিশোর ও ১ কিশোরী। এছাড়া এ মাসে আহত হয়েছেন ২ জন পুরুষ। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে বজ্রপাতে মোট ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জন পুরুষ ও ৬ নারী রয়েছে। নারী ও পুরুষের মধ্যে ২ শিশু রয়েছে। পুরুষের মধ্যে ৪ জন কিশোর ও নারীর মধ্যে ২ কিশোরী রয়েছে। এ মাসে আহত হয়েছেন ১২ জন। এর মধ্যে ১০ পুরুষ ও ২ জন নারী রয়েছে।
মৃত্যুর এ পরিসংখ্যান কমাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন রাশিম মোল্লা। দফাগুলো হলো, পাঠ্যপুস্তকে বজ্রপাত সচেতনতার অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা, ৩০ মিনিট আগেই বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানা যায়, গভ ইন ফোর মাধ্যমে তা জানানো, কৃষকও জনসাধারণের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মাঠে মাঠে শেল্টার সেন্টার স্থাপন এবং আহতদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সবচেয়ে বেশি মারা গেছে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত খেটে খাওয়া মানুষ। বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় একাধিক মন্ত্রণালয় বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা শুনে আসছি। কিন্তু সেগুলোর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। শুধু সচেতনতার অভাবেই বহু মানুষের প্রাণ হানি ঘটছে। কিন্তু সরকারে পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকরী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।