■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর মাদাগাস্কারের ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়েছে সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার রাতে মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর কর্নেল মাইকেল র্যান্ড্রিয়ানিরিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন ও পাস হয়। রাজধানী আন্তানানারিভোতে অনুষ্ঠিত সেই ভোটে ১৩০ সংসদ সদস্য অভিশংসনের পক্ষে মত দেন। ভোটের পর দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এরই মধ্যে রাজধানীর সামরিক সদর দপ্তর থেকে সেনাবাহিনীর এক কর্নেল ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হয়ে তিনি বলেন, “জাতির নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সেনাবাহিনী দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করব।”
আন্দ্রি রাজোয়েলিনা বর্তমানে ফ্রান্সে আশ্রয় নিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। তিনি ২০০৯ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় আসেন এবং এর পর থেকে তিন দফায় দেশ শাসন করেছেন।
মাদাগাস্কারে নাটকীয় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোলিনার বিরুদ্ধে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেনাবাহিনীর অভিজাত ইউনিট ক্যাপসাট ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় রেডিওতে দেয়া এক বিবৃতিতে ক্যাপসাট ইউনিটের প্রধান কর্নেল মাইকেল র্যান্ড্রিয়ানিরিনা ঘোষণা দেন, ‘আমরা ক্ষমতা নিয়েছি।’
এই ঘোষণা দেয়ার পর কর্নেল র্যান্ড্রিয়ানিরিনা ও তার সহকর্মী সেনারা প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে অবস্থান নেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সামরিক পোশাক পরিহিত সেনারা রাজপ্রাসাদের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। এর আগে শনিবার ক্যাপসাট প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্ব অমান্য করে আকস্মিকভাবে রাজোলিনার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।
এর আগে সোমবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় ৫১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রজোয়েলিনা তার অবস্থান প্রকাশ না করেই বলেন, সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের একটি দল আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। নিজের জীবন বাঁচাতে আমি নিরাপদ স্থান খুঁজতে বাধ্য হয়েছি। তবে তিনি পদত্যাগের কোনো ঘোষণা দেননি।
গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশটিতে ‘জেন জি মাদা’ নামে পরিচিত তরুণ বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে সরকার বিরোধী প্রতিবাদ চলছে। প্রথমে পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি নিয়ে এই প্রতিবাদ শুরু হলেও পরে এটি দুর্নীতি, উচ্চ বেকারত্ব এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মতো ব্যাপক অসন্তোষে রূপ নেয়।
বিক্ষোভ থামাতে রজোয়েলিনা তার পুরো মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলেও, বিক্ষোভকারীরা তার পদত্যাগ দাবিতে অনড় থাকে।