মাগুরার নির্যাতিত সেই শিশুকে সিএমএইচে স্থানান্তর

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শনিবার বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, আজ বিকেল ৫টার পর শিশুটিকে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সে সিএমএইচে নেওয়া হয়। এ সময় শিশুটির সঙ্গে একদল চিকিৎসক ছিলেন। এর আগে আজ দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্যে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে বলে জানানো হয়। পাশবিক নির্যাতনের কারণে শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। তার গলার আঘাত গুরুতর। শিশুটির চিকিৎসায় গাইনি ও অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাঁদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

সকালে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শিশুটির মামাতো ভাই বলেন, তাঁর বোন এখনো অচেতন। তার জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাঁরা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখবেন। অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আনা হয়। সেখান থেকে দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁদের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। শিশুটি কয়েক দিন আগে তার বড় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিশুটির গলায় একটা দাগ আছে। মনে হচ্ছে, কিছু দিয়ে চেপে ধরা হয়েছিল। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় আঁচড় আছে। তার যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী গতকাল সকালে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তার পরিবারের সবাই ঢাকায়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি। তিনি জানান, শিশুটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

বোনের স্বামীর সহায়তায় শিশুটিকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর

মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। আজ শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রুজু হয়।

মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪) এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তাঁদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এ মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪২), বোনের শ্বাশুড়ি  জাহেদা (৪৫) বোনের স্বামী সজীব শেখ (১৮) ও বোনের ভাসুর  রাতুল শেখকে (২০ ) আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় এজহারভুক্ত  চারজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ৪ মাস আগে মাগুরার নিজন্দুয়ালী গ্রামের হিটু শেখের ছেলে সজিবের সাথে বড় মেয়ের বিয়ে হয়। পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। কিন্তু বিবাহের পর থেকেই হিটু শেখ তার ছেলের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আমার বড় মেয়েকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছে। বিষয়টি সকলেই জানে। এরই মধ্যে গত ১ মার্চ (শনিবার) আমার ছোট মেয়ে মাগুরায় বড় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে ঘরের দরোজা খোলা পেয়ে মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখ ঘুমন্ত ছোট মেয়েকে নিজের ঘরে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় মেয়েটি চিৎকার করলে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে।

রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে বড় মেয়ে অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে এবং ধর্ষণের ঘটনা জানতে পারে। এ সময় এ ঘটনা পরিবারকে জানাতে চাইলে মোবাইল কেড়ে নিয়ে বড় মেয়েকে  মারধর করে আটকে রাখে। ঘটনাটি জামাই সজীবসহ পরিবারের সদস্যরা কাউকে না বলার জন্য বড় মেয়েকে নিষেধ করে। শুধু তাই নয়, এমনকি ধর্ষণের শিকার শিশু এবং তার বড় বোনকে হিটু শেখের ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়। চিকিৎসা ছাড়া দীর্ঘ সময় আটকা থাকায় শিশুটির কাতর চিৎকারে ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তারা শিশুটিকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। পরে তাকে মাগুরা থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। একই দিন সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে মাগুরার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা জানান, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় ধর্ষণের পর হত্যাচেষ্টার মামলার করেছেন। দুপুরে মামলাটি গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে মামলার এজাহারে উল্লেখিত চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *