আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাহমুদউল্লাহ

■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■ 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টেস্ট ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এবার ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিলেন।

গত ১০ মার্চ কেন্দ্রীয় চুক্তির নতুন তালিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যেখানে সেই তালিকা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ।

বুধবার (১২ মার্চ) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মাহমুদউল্লাহ। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সকল সতীর্থ, কোচ এবং বিশেষ করে আমার ভক্তদের ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা সবসময় আমাকে সমর্থন দিয়েছে।’

‘বিশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই, আমার মা-বাবাকে, আমার শ্বশুরকে এবং আমার ভাই এমদাদউল্লাহকে, যে একজন কোচ এবং পরামর্শক হিসেবে শৈশব থেকেই আমার পাশে ছিল।’।

তিনি লিখেছেন, ‘সবকিছুর শেষটা হয়তো সুন্দর হয় না কিন্তু আপনাকে মেনে নিতে হয় এবং এগিয়ে যেতে হয়। শান্তি…আলহামদুলিল্লাহ। আমার দল এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভকামনা।’

২০০৭ সালের ২৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু মাহমুদউল্লাহর। শেষটাও করলেন ওয়ানডে দিয়েই। এই সংস্করণের ক্রিকেটে সবমিলিয়ে খেলেছেন ২৩৯ ম্যাচ। যেখানে ৩৬ গড়ে করেছেন ৫ হাজার ৬৮৯ রান। ৩২ ফিফটির পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন চার সেঞ্চুরি। পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছেন ৮২ উইকেট।

এ ছাড়া ৫০ টেস্ট খেলে প্রায় ৩৩ গড়ে করেছেন ২ হাজার ৯১৪ রান। যেখানে তার নামের পাশে ১৬ ফিফটির আর ৫ সেঞ্চুরি। পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছেন ৪৩ উইকেট। 

বাংলাদেশের জার্সিতে মাহমুদউল্লাহ টি-টোয়েন্টি খেলেছে ১৪১ টি। যেখানে প্রায় ২৪ গড়ে করেছেন ২ হাজার ৪৪৪ রান। পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছেন ৪১ উইকেট।

জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচও খেলেছেন ওয়ানডেতে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

মাহমুদউল্লাহ টেস্ট ও টি–টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছিলেন আগেই। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্ট খেলে সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। আর টি–টোয়েন্টি থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নেন ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদে খেলে।

২৩৯ ওয়ানডে খেলা মাহমুদউল্লাহ তিন সংস্করণ মিলিয়ে খেলেছেন মোট ৪৩০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। মুশফিক (৪৭০) ও সাকিব আল হাসানের (৪৪৭) পর এটি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দলকে ৪৩ টি–টোয়েন্টিতে নেতৃত্বও দিয়েছেন, যার মধ্যে ছিল ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৬টি টেস্টেও।

গত মাসে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মধ্যেই তাঁর অবসর নিয়ে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে জোরালো আলোচনা ছিল। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ বলে ৪ রানের ইনিংসটি নিয়ে সমালোচনা হলেও অবসর–প্রশ্নে চুপ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ইতি টানার আগে সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজাও কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মাশরাফি আনুষ্ঠানিক বিদায় না বললেও তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন গত জানুয়ারিতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মুশফিক।

ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দারুণ ব্যাটিং করেন তিনি। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। টুর্নামেন্টে আট ম্যাচে ব্যাটিং করে নিয়মিত রান করেছেন তিনি। বিশ্বকাপ ছিল ৩৯ বছর বয়সী এ ব্যাটারের ক্যারিয়ারের লাইফলাইন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে রান করে। শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতে হাফ সেঞ্চুরি (৯৮, ৫০*, ৬২, ৮৪*) করেন মাহমুদউল্লাহ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ

সংস্করণম্যাচরানগড়সেঞ্চুরি/ফিফটিউইকেট
টেস্ট৫০২৯১৪৩৩.৪৯৫/১৬৪৩
ওয়ানডে২৩৯৫৬৮৯৩৬.৪৬৪/৩২৮২
টি–টোয়েন্টি১৪১২৪৪৪২৩.৫০০/৮৪১

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *