■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট সীমান্ত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে পুলিশ।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফয়সাল ও আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত হয়ে ভারতে পালিয়েছে। আমরা মেঘালয় রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ফয়সাল ও আলমগীরকে মেঘালয়ে তাদের সহায়তা করার অভিযোগে দেশটির পুলিশ পুর্তি ও সামী নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাদি হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে। হাদি হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুটি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, হত্যায় ব্যবহৃত বাইক উদ্ধার করা হয়েছে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ফয়সালের তিনটি আইটি ফার্ম রয়েছে। এই ফার্মের ৫৩টি একাউন্টের ২১৮ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকতে পারে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন, হাদির হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনার পর ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আমিনবাজারে যান। সেখান থেকে গাড়িতে করে কালামপুরে যান। কালামপুর থেকে আরেকটি গাড়িতে করে ময়মনসিংহ সীমান্তে যান। সেখানে ফয়সাল ও আলমগীরকে নেন ফিলিপ পাল ও সঞ্জয়। তাঁরা সীমান্তে অবৈধভাবে মানুষ পারাপার করেন। পরে ফিলিপ দুজনকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে নিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ফয়সাল ও আলমগীরকে ভারতের তুরা নামক স্থানে নিয়ে যান ফিলিপ। সেখানে ভারতীয় নাগরিক পূর্তির কাছে তিনি দুজনকে পৌঁছে দেন। পরে সামী নামের এক ব্যক্তির গাড়িতে করে সেখান থেকে পালিয়ে যান তাঁরা।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হাদি হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ৪ জন সাক্ষীও আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সবার নাম বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে এটাকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডই মনে হচ্ছে।’
শহীদ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে মাথায় গুলি করার পর আততায়ীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।
গত রোববার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ-সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের পাশে দাফন করা হয়।
