শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। শুক্রবার বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা) নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।

নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে নিরলস প্রচেষ্টা এবং ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণভাবে স্বৈরশাসনের উৎখাত করে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রামের জন্য মাচাদোকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মোট ৩৩৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম নিবন্ধন করেছিল। নোবেল প্রাইজের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এটি জমার শেষদিন ছিল গত ৩১ জানুয়ারি। যাদের মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি ও ৯৪টি প্রতিষ্ঠান।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রাউন, যা প্রায় ১২ লাখ ডলারের সমান। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।

এক বছর ধরে আত্মগোপনে আছেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো। তাঁর জীবন গুরুতর হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশেই আছেন, যা লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি দেশের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করেছেন। ভেনেজুয়েলায় সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সব সময় ছিলেন অটল।

নোবেল কমিটি বলেছে, স্বৈরশাসকেরা যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন যাঁরা স্বাধীনতা রক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখেন, তাঁদের চিহ্নিত করা এবং তাঁদের উদ্দীপনা ও প্রতিরোধকে স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫৮ বছর বয়সী মাচাদো শুধু একজন রাজনীতিক নন, তিনি একজন শিল্প প্রকৌশলীও। ভেনেজুয়েলায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি।

আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মাচাদো নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। ফলে বিরোধীদলীয় প্রার্থী হিসেবে অ্যাডমান্ডো গঞ্জালেস উরুতিয়াকে সমর্থন দেন এবং তাঁর পক্ষে প্রচার চালান তিনি।

তবে ওই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ব্যাপক বিরোধ দেখা দেয়। প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে জয়ী ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। তবে বিরোধীরা এই ফলাফল নাকচ করে দেয়। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে তারা দাবি করে, নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী অ্যাডমান্ডো গঞ্জালেস জয়ী হয়েছেন।

ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর তা বাতিলের দাবিতে ভেনেজুয়েলাজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট মাদুরো কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমনের পথে হাঁটেন। এতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

সরকারি দমন-পীড়নের মুখে বিরোধী নেতা গোনসালেস আত্মগোপনে থাকার পর দেশ ছেড়ে চলে যান। জীবনের ঝুঁকি থাকায় আত্মগোপনে যেতে হয় কোরিনা মাচাদোকেও।

গত বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিল জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টা এবং পরমাণু অস্ত্র আর কখনো ব্যবহার করা যে উচিত নয়, সেটি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য জাপানের সংগঠনটিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

১৯০১ সালের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১১১ জন ব্যক্তি ও ৩১টি সংস্থা। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ৯২ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী।
 
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হলেন পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই। তিনি ২০১৪ সালে ১৭ বছর বয়সে এই পুরস্কার লাভ করেন। আর সবচেয়ে বেশি বয়সে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ব্রিটিশ-পোলিশ পদার্থবিজ্ঞানী জোসেফ রটব্ল্যাট। পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৫ সালে ৮৬ বছর বয়সে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

শুরুতে নোবেল বিজয়ীদের প্রায় দেড় লাখ ক্রোনা দেওয়া হতো। বাড়তে বাড়তে ১৯৮১ সালে তা ১০ লাখ ক্রোনা হয়। এরপর পুরস্কারের আর্থিক মূল্য দ্রুত বাড়ানো হয়। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো এর পরিমাণ ১ কোটি ক্রোনা হয়।

সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারি মাসে বাড়ানো হয় নোবেল পুরস্কারের আর্থিক সম্মানী। এ বছরের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা মোট ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (৯ লাখ ৮৬ হাজার ডলার) পাবেন, যা আগের চেয়ে ১০ লাখ ক্রোনা বেশি। নোবেল ফাউন্ডেশনের তহবিলের উন্নতি হওয়ায় এ বছর পুরস্কারের আর্থিক সম্মানী বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ফাউন্ডেশনের তহবিলে টান পড়ায় ২০১২ সালে পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি ক্রোনা থেকে কমিয়ে ৯০ লাখ করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে ৯০ লাখ এবং ২০২০ সালে ফের এক কোটিতে উন্নীত করা হয়।

গত এক দশকে ইউরোর বিপরীতে প্রায় ৩০ শতাংশ দর হারিয়েছে সুইডিশ ক্রোনা। ফলে পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ লাখ ক্রোনা বাড়ানো হলেও সুইডেনের বাইরে তা ততটা বাড়বে না।

২০১৩ সালে আর্থিক সম্মানী কমিয়ে ৮০ লাখ ক্রোনা করা হয়। তখনো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রায় এই পুরস্কারের পরিমাণ দাঁড়াত ১২ লাখ ডলার। সেটা বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনা হলেও বিনিময় হারের খেলায় ২০২৪ সালে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ডলারের কম। মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় নিলে নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্যমান খুব একটা বাড়েনি।

বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার মূল্যমান দাঁড়ায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার বেশি। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *