নিখোঁজের ৫ দিন পর মাওলানা মামুনুর রশীদকে উদ্ধার

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

জুলাই আন্দোলনের কর্মী ও তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মামুনুর রশীদ নিখোঁজ হওয়ার পাঁচদিন পর উদ্ধার করেছে তুরাগ থানা পুলিশ।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় পূর্বাচলের ১ নম্বর সেক্টরের মসজিদ থেকে তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

তুরাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাদিক রহমান জানান, আমরা খবর পেয়ে পূর্বাচল জামে মসজিদ থেকে দুপুর ২টায় তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করি। 

তুলে নেওয়ার বিবরণ দিয়ে মাওলানা মামুন বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় আমি সকালে ফজরের পর হাঁটতে বের হই। হঠাৎ রিকশায় ৩ জন ব্যক্তি আমাকে বলে ভাই আমরা প্রতিদিন কাচা বাজারে গিয়ে চাঁদাবাজির শিকার হই। আমাদের সাথে একটু আসেন। এরপর আমি যেতে চাচ্ছিলাম না। তবুও বলা যায় কথার রিকুয়েষ্টের জেরে আমাকে নিয়ে যায়। আমিও ভাবলাম কী হবে যাই।

এরপর কামারপাড়া স্ট্যান্ড পার হওয়ার আগেই রিকশা ভাড়া দিয়ে দেয় ওরা। কাঁচাবাজারের সামনে রিকশা থামতেই একটা হাইস (মাইক্রোবাস) আসে। সেটাতে ভেতরে তিনজন ছিল। বাহিরে থাকা ৩ জন আমাকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে ফেলে। এরপর আমাকে সাব্বিরের ছবি দেখায়। আমি হ্যাঁ চিনি উত্তর দিতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সম্ভবত চেতনা নাশক কিছু ছিল। এরপর আর কিছু বলতে পারি না।

উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, পরে যখন জ্ঞান ফিরে সেখানে আমাকে সম্পূর্ণ সময় একটা চেয়ারেই বসিয়ে রাখা হয়। পুরো সময়টা চেয়ারেই ছিলাম। কখন ঘুমালাম কখন কী সেটা জানি না। আজকে হঠাৎ করে মুখে পানি ছিটালেন কয়েকজন। পরে দেখি আমি পূর্বাচলের ওই মসজিদের ওখানে।

এদিকে তাঁকে উদ্ধারের পর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে তাঁর দেওয়া বক্তব্যে অসংগতি রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম (অতিরিক্ত ডিআইজি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, মামুনের শরীরে কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁকে মারধরও করা হয়নি। তাঁকে মোবাইলের পাসওয়ার্ডের জন্য শুধু দুটি চড় মারা হয়েছিল। আবার ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করানো হয়েছিল বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন।

অপহরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁর স্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, সাধারণত মামুন হাঁটতে বের হলে লুঙ্গি পরে বের হন। কিন্তু ওই দিন তিনি প্যান্ট ও পাঞ্জাবি পরে বের হয়েছিলেন। এর পর থেকে তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। পরে ওই দিনই একটি নিখোঁজ জিডি হয়।’

মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু মামুন জুলাই যোদ্ধা ছিলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সহিত আমলে নিয়েছি। ওই এলাকার সব সিসিটিভি ক্যামেরা তল্লাশি করেছি। শুধু একটি সিসি ক্যামেরায় তাঁকে একটি অটোতে করে যেতে দেখা গেছে। সেখানে তিনি নিজেই গিয়ে ওঠেন। তাঁকে কেউ ফোর্স করেনি।’

মহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পরে তদন্ত করে আমরা চার-পাঁচটি ফেসবুক পেজ পেয়েছি। অনেকগুলো মোবাইল নম্বর পেয়েছি। গত পরশু দিন তাঁর একটি ফেসবুকে পেজে একটি পোস্ট হয়েছিল। আবার সেটি ডিলিটও হয়েছে। সেই পেজটি আবার তাঁর স্ত্রীর মোবাইলেও লগইন ছিল। সব বিষয় মিলিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করি।’

মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিসি মহিদুল বলেন, ‘ওই দিন বাসা থেকে বের হওয়া পর একটি অটোরিকশায় উঠেছিলেন। ওই অটোরিকশায় আরও তিনজন ছিলেন। ওই তিনজন নাকি তাঁকে বলেছিলেন, তাঁরা কাঁচাবাজার কিনতে যাবেন। সেখানে অনেক সময় চাঁদা চায়, সে জন্য যেতে বলেন। কিন্তু ওই তিনজনকে মামুন চিনতেন না। কিন্তু তাঁকে তাঁরা চেনেন।’

ডিসি আরও বলেন, ‘সেখানে যাওয়ার পর একটি মাইক্রো আসে। পরে সেই মাইক্রোতে করেই তাঁকে নিয়ে গেছে। নিয়ে গিয়ে বেঁধে রেখেছিল। আবার ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও দিয়েছিল। আজকে সকালে নাশতাও দিয়েছিল। তখন আমরা মামুনের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি, বাজারে ওইখানে তো বহু লোক থাকে, আপনি চিৎকার-হইচই করলেন না কেন?’

ডিসি মহিদুল বলেন, ‘আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাঁর কথা আমাদের কাছে অসংগতিপূর্ণ লেগেছে। সেটা আমরা আরও ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারব।’

এদিকে নিখোঁজ মামুনের বাবা মো. সফি বলেন, ‘আমার ছেলে অসুস্থ অবস্থায় আছে। সুস্থ হলে বাকিটা বলতে পারবে। নিখোঁজের বিষয়ে আমি জিজ্ঞাসাও করি নাই, বলতেও পারব না। প্রশাসনের লোক আছেন, তাঁরাই জিজ্ঞাসা করেছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন।’

উল্লেখ্য, তুরাগের কামারপাড়া এলাকা থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সকালে নিখোঁজ হয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুরাগ থানার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও এনসিপির আহ্বায়ক প্রার্থী কে এম মামুনুর রশীদ। ওই দিনই তাঁর স্ত্রী খাদিজা আক্তার তুরাগ থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *