■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
পাঁচদিনের মাথায় ফের ঢাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৩ দশমিক ৬। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশালে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এটা স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশাল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬।
এদিকে ভারতের জাতীয় ভূকম্পবিদ্যা কেন্দ্র (এনসিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার ভেতরে।
এর আগে গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে মাধবদীতে, কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। স্থায়িত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড। এ ঘটনায় তিন জেলায় প্রাণ হারান অন্তত ১১ জন, আহত ছয় শতাধিক। ঢাকার বহু ভবনে ফাটল, কোথাও কোথাও হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে।
এর পরদিন শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে আরও একটি মৃদু ভূমিকম্প হয়। এটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর পলাশ। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। একই দিন সন্ধ্যায় পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়।
এটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডায়। এর এক সেকেন্ড পর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ৪ দশমিক ৩, উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে।
বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, গত শুক্রবারের পর থেকে এখন আজ পর্যন্ত ৬ দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হলো। ২১ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার যে ভূমিকম্প হয়েছিল, এটা স্মরণকালের মধ্যে দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। ভূপৃষ্ঠে এত তীব্রতা এর আগে আমরা কখনো অনুভব করিনি। স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার নগরবাসী সাংঘাতিক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
আজও ঘটনাক্রমে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে খুবই কাছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায়। ছয়টির মধ্যে তিনটি ভূমিকম্পরেই উৎপত্তিস্থল হলো নরসিংদী। এই এলাকা হলো বার্মা প্লেট এবং পশ্চিমেরটি ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল বা সাবডাকশন জোন। এর এলাকা বিশাল। আজ সিলেটে ও টেকনাফে যে ভূমিকম্প হয়েছে তাও এই সাবডাকশন জোনের অর্ন্তর্ভূক্ত।
১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে সারাদেশে ৩ বার ভূমিকম্প
মাত্র ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে বাংলাদেশে তিনটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যদিও কম্পনগুলোর মাত্রা ছিল মৃদু ও মাঝারি, তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গতকাল মধ্যরাত ৩টার পর থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে প্রায় ১৩ ঘণ্টার মধ্যে এই কম্পনগুলো অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনগুলোর মাত্রা ছিল মাঝারি বা হালকা।
এর মধ্যে প্রথম ভূমিকম্প অনুভূত হয় গতকাল মধ্যরাতে। রাত ৩টা ২৯ মিনিটে টেকনাফ থেকে ১১৮ কিলোমিটার দূরে ৪ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এ ভূমিকম্পে কেঁপেছে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ শহর।
ভূকম্পনবিষয়ক ওয়েবসাইট ভলকানো ডিসকভারি জানিয়েছে, টেকনাফে খুব অল্প ঝাঁকুনি দেওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ এটি টের পাননি।
ভলকানো ডিসকভারি বঙ্গোপসাগরের ভূমিকম্পের উৎপত্তির গভীরতার তথ্য জানাতে না পারলেও ইএমএসসি বলেছে, এটি মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়েছিল।
এরপর রাত ৩টা ৩০ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে সিলেটে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৪। এটি মৃদু ভূমিকম্প হওয়ায় অনেকেই টের পাননি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৩০ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে ৩ দশমিক ৪ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মনিপুরে। এরপর আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৃতীয় কম্পনটি অনুভূত হয়। যার মাত্রা ছিল ৩.৬।
ছোট ভূমিকম্পগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে চাপ কমানোর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া
রিখটার স্কেল অনুযায়ী ৮ মাত্রা বা তার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্পকে বলা হয় ‘গ্রেট আর্থকোয়েক’। সারা পৃথিবীতে এমন ভূমিকম্প বছরে গড়ে মাত্র ১টি ঘটে। ৭ মাত্রার ভূমিকম্পও খুব কম। বছরে মাত্র ১৮টির মতো। একটু নিচে নামলে, ৬ মাত্রার ভূমিকম্প দেখা যায় বছরে প্রায় ১২০ বার, আর ৫ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে প্রায় ৮০০ বার। এই ভূমিকম্পগুলোই সাধারণত খবরে আসে। এর নিচের মাত্রার ভূমিকম্প মানুষ খুব বেশি টের পায় না। কিছু মানুষ টের পেলেও এগুলোতে বাস্তব ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
তবে ৪ মাত্রার নিচের ভূমিকম্পও এখন খবর। কারণ, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। ৪ মাত্রার নিচে যে ভূমিকম্প হয়, তার সংখ্যা অনেক বেশি। ৪ থেকে ৪ দশমিক ৯ মাত্রার হালকা ভূমিকম্প বছরে প্রায় ৬ হাজার ২০০ বার ঘটে। আর ৩ থেকে ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে বছরে ৪৯ হাজার বার। মানে দিনে শত শত বার। এদের বেশির ভাগই এত ক্ষুদ্র, সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারে না। এর চেয়ে আরও ছোট ভূমিকম্প, যেমন ২ কিংবা ১ মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিদিন হাজার হাজার বার পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে।
এত সংখ্যক ছোট ভূমিকম্পের ভিড়ে একটা বিষয় নিশ্চিত। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, এই মাত্রার ভূমিকম্প বছরে প্রায় ৪৯ হাজার বার ঘটে। সাধারণত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট বা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। এই ছোট ভূমিকম্পগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে চাপ কমানোর মতো স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।
