■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার ৯৭ দিন পর হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল শিক্ষার্থী নাভিদ নেওয়াজ। স্কুলটির ৭ম শ্রেণিতে পড়ে সে। এই সময়ের মধ্যে ৩৬ বার ছোটবড় অপারেশন হয়েছে তার।
সোমবার দুপুরে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকেরা তাকে ছাড়পত্র দেন।
ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম বলেন, ২১ জুলাই এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নাভিদের শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সিএমএইচ থেকে পরদিন তাকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরপর দুইবার তার পরিবারকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল—যে কোনো সময় দুঃসংবাদ আসতে পারে! তবে চিকিৎসকেরা হাল ছাড়েনি। মোট ২২ দিন সে আইসিইউতে ভর্তি ছিল। যার মধ্যে ১০ দিন রাখা হয়েছিল লাইফ সাপোর্টে। এরপর ৩৫ দিন হাইডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়। এরপর ৪০ দিন কেবিনে থাকার পর আজ তাকে পুরোপুরি সুস্থ ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
তিনি আরও বলেন, নাভিদের মোট ৩৬ বার ছোটবড় অপারেশন হয়েছে। শরীরের ক্ষতস্থানে ত্বক প্রতিস্থাপন হয়েছে আটবার। এই ঘটনার অন্য কোনো দগ্ধ রোগীর এটি লাগেনি।
নাভিদের বিষয়ে বলতে গিয়ে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, তার বয়স ১২ বছর। সে মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ভর্তি হওয়ার সময় তার শরীরের ৪৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। পুড়ে যাওয়ার ধরন ছিল মিশ্র, তবে বেশির ভাগ জায়গায় ছিল গভীর পোড়া। দুই হাত, পিঠ ও শরীরের কিছু অংশ এবং শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার শ্বাসযন্ত্রে গুরুতর সমস্যা তৈরি হয়েছিল। ফুসফুসে পানি জমে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘নাভিদকে যেদিন এখানে নিয়ে আসা হলো, সেদিন সে বারবার বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল। সে বলছিল, আমাকে বাঁচান, আমি কি বাঁচব? দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়ার পর তার ফুসফুসে পানি জমেছিল। এ জন্য লাইফ সাপোর্টেও উপুড় করে শুইয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেখান থেকে সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। এখনো এই ঘটনার ৫ জন দগ্ধ শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে। তারাও ভালো আছে। সপ্তাহখানেক পর তারাও বাড়িতে চলে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৫৭ জন ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। এখন পাঁচজন ভর্তি আছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই তাদেরও ছাড়পত্র দেওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
নাভিদের বাবা মিজানুর রহমান চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর কাছে ছেলে ও এই ঘটনায় হতাহতের জন্য দোয়া চেয়েছেন।
গত ২১ জুলাই দুপুর ১টা ১৫ মিনিটের দিকে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ২৭ জনই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল।
