প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে মিরপুরের আগুন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

রাজধানীর মিরপুরের রুপনগরের শিয়ালবাড়ীতে পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন প্রায় ২৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। 

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এর আগে দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) কাজী নজমুজ্জামান বলেছেন, সকালে আমরা কেমিক্যাল স্যুট পরে, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে রাসায়নিক গুদামের দরজা খুলেছি। ভেতরের অবস্থা দেখেছি। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে ধোঁয়ার কারণে এখন আমাদের অভিযান চালানো নিরাপদ নয়। অভিযান শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ‘গতকাল সকাল ১১টা ৪০ থেকে আমাদের কাজ চলছিল। আনোয়ার গার্মেন্টস অংশের আগুন মঙ্গলবারই নিয়ন্ত্রণে আসে। আজ দুপুরে আলম ট্রেডার্স নামে পরিচিত কেমিক্যাল গোডাউনের আগুনও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গোডাউনে ৬ থেকে ৭ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছিল। এখন ধাপে ধাপে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। রাসায়নিকের পরিমাণ ও প্রকৃতি যাচাই-বাছাই করতে সময় লাগবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন কেমিকেল থেকে টক্সিক গ্যাস তৈরি হয়েছে। এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে গেলে মানুষের ত্বক, ফুসফুস, হার্টের সমস্যা হতে পারে। আমরা মাইকিং করে স্থানীয়দের বলছি- সবাই দূরে থাকুন, নিজেদের নিরাপদে রাখুন। আমরা ঘটনাস্থলে কাজ করছি, যখন নিরাপদ হবে তখন এটি খুলে দেওয়া হবে। রাসায়নিকের বিষয়টি খুবই বিপদজনক। রাসায়নিক সামগ্রী গুদামজাত করার যে নীতিমালা রয়েছে, সেটি না মানা হলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের মিশ্রণে বড় ধরনের বিক্রিয়া হতে পারে। এই কারণে একটু বেশি সময় লাগবেই। 

শিয়ালবাড়ির ৩ নম্বর সড়কে টিনশেডের রাসায়নিক গুদাম ও চারতলা ভবনটি অবস্থিত। ভবনটির দোতলায় স্মার্ট প্রিন্টিং নামের একটি কারখানায় টি-শার্ট প্রিন্ট করা হয়। আর তিন ও চারতলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা আছে।

ভবনটি চারতলা হলেও ছাদে টিনশেড দিয়ে আরও একটি তলা করা হয়েছে। এই ভবন ও টিনশেডের রাসায়নিক গুদামে কোনও অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ভবন ও গুদাম কোনোটিরই ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া আগুনে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা সবাই পাশের তৈরি পোশাক কারখানার (গার্মেন্টস) কর্মী বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কাছে এই আগুনের সংবাদ আসে। পরে সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

উদ্ধার হওয়া ১৬টি লাশ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বুধবার দুপুরের দিকে তার দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ৯ জন পুরুষ ও ৭ জন নারীর লাশ এখানে এসেছে। লাশগুলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। স্বজনেরা চাইলে, আর পুলিশ বা জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে শনাক্ত হওয়া লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা যাবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *