■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বঘোষিত অনলাইন বক্তব্য ঘিরে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে মিছিল নিয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালাচ্ছে ছাত্র-জনতা। শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে একদল ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঢুকে বাড়ির দেয়াল, দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর চালাচ্ছে।
বাসভবনটির সামনের সড়কে যেন বিক্ষুব্ধ জনতার ঢল নেমেছে। সড়কের কোথাও দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই। এ সময় কয়েকজনকে বাসভবন এবং জাদুঘরটির ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তাদের কারো কারো হাতে লাঠি। কয়েকজনকে বাসভবনটির সামনে শেখ মুজিবের ম্যুরালটি ভাঙচুর করতে দেখা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীকে ‘৩২-এ আগুন, ৩২-এ ভাঙচুর’, ‘শেখ হাসিনা আর নেই’ বলে স্লোগান দিতে শোনা যায়।
এ সময় উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জনে জনে খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সেইসঙ্গে কাউকে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকতেও দেখা যায়। একজন লিখেছেন, ‘৩২ আর নেই’।
বাসভবনের একটি গেট হাতুড়ি দিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকজনকে দেয়ালের ওপরের কাঁটাতার খুলে ফেলতে দেখা যায়।
বাসভবনের কাছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী বিক্ষুব্ধ জনতাকে জাদুঘরে আগুন না দেওয়ার অনুরোধ করতে দেখা যায়।
এর আগে কর্মসূচির বিষয়ে ফেসবুকে একটি পোস্টে বলা হয়, ”ধানমন্ডি-৩২ অভিমুখে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ বুলডোজার মিছিল। হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ রাত ৯টায় এ কর্মসূচি পালিত হবে।”
আরেক পোস্টে বলা হয়, ‘খুনী আসলে লাইভে, জনতা যাবে ৩২-এ’।
এদিকে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগে থেকেই ধানমন্ডি-৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ঘোষণা করেন, শেখ হাসিনা কোনো বক্তব্য দিলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে শেখ হাসিনার ভাষণের আগেই এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলো।
এর আগে সন্ধ্যায় ‘উৎসব হোক!’ লিখে হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এদিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’
আরেক পোস্টে হাসনাত লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিনও ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।