শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সোমবার ঈদ

■ নাগরিক প্রতিবেদন 

১৪৪৬ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে আগামীকাল সোমবার (৩১ মার্চ)। রোববার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা ও পর্যালোচনা কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।

আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সব জায়গা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৯ রমজানে দেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল সোমবার (৩১ মার্চ) থেকে ১৪৪৬ হিজরি সালের পবিত্র শাওয়াল মাস গণনা শুরু হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ), ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের প্রশাসক মো. ফখরুল ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

একই ভৌগোলিক অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও আগামীকাল সোমবার ঈদুল ফিতর পালিত হবে।

এর আগে আজ রোববার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে সৌদি, ফিলিস্তিন ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন ও কুয়েতসহ ১১টি মুসলিম দেশ। এসব দেশে শনিবার সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ায় আজ ঈদ পালন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক বসার আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র জানায়, রোববার বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যাবে। আর সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।

গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে আরবি ভাষায় একটি পোস্টে জানায় ‘বাংলাদেশ : সোমবার ৩১ মার্চ’ ঈদুল ফিতর। বাংলাদেশে এখন সূর্য অস্ত গেছে। আজ (সেখানে) ২৮ রমজান। কাল রোববার খালি চোখে চাঁদ দেখা যাবে।’

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস।

ঈদের তারিখ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে এবং তা প্রতিবছরই পরিবর্তিত হয়। সাধারণত চান্দ্র মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হয়। তাই মুসলমানদের সাধারণত ঈদের আগের রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় ঈদের তারিখ নিশ্চিত হওয়ার জন্য। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় এবার ২৯টি রোজা শেষে ঈদ উদ্‌যাপিত হচ্ছে।

এদিকে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এরপর গত শুক্রবার থেকে লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ছুটি হওয়ায় এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কম। 

ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত দেশের গ্রাম-মহল্লার ঈদগাহ ময়দান। ঢাকা মহানগরীতে ১১১ ঈদগাহ ও ১৫৭৭ মসজিদসহ এক হাজার ৭৩৯টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। 

তবে আবহাওয়া প্রতিকূল হলে বা অন্য কোনও কারণে জাতীয় ইদগাহ মাঠে জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত হবে। এবারও এখানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায়, এর এক ঘণ্টা পর পর তিনটি জামাত এবং পঞ্চম ও শেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ। প্রায় ২২ একর আয়তনের এ ময়দানে ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনারের সামনে সকাল ৯টায় হবে ঈদ জামাত। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এবার এখানে হবে ১৯৮তম জামাত।

ঈদের প্রধান জামাত

মো. সাহাবুদ্দিন,

রাজধানীতে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে জাতীয় ইদগাহ ময়দানে, সকাল সাড়ে ৮টায়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ সহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ ঈদগাহের প্রধান জামাতে অংশ নেবেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ইমাম হিসেবে এ জামাতে দায়িত্ব পালন করবেন। ক্বারী হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

ঈদুল ফিতরে বায়তুল মোকাররমে ৫ জামাত

পবিত্র ঈদুল ফিতরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। পরে এক ঘণ্টা পর পর বাকি চারটি জামাত হবে। শেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বেলা পৌনে ১১টায়।

চাঁদ দেখলে যে দোয়া পড়া সুন্নত

রমজানের রোজার শেষে পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। শাওয়ালের চাঁদরাত হলো ঈদের রাত।

ইসলামে যে রাতগুলো ইবাদতের জন্য এবং ফজিলতে পরিপূর্ণ, সেসবের অন্যতম এই ঈদের রাত।

চাঁদরাতের প্রথম সুন্নত ও ফরজে কিফায়া আমল হলো সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ দেখা। চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার সংবাদ নিশ্চিত হলে দোয়া পড়া সুন্নত (তিরমিজি ৩৪৫১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ করো। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পূর্ণ করে নাও।

হাদিসে নতুন চাঁদ দেখার একটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। তা হলো- 

اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ رَبِّي وَرَبُّكَ اللَّهُ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ : হে আল্লাহ, তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত করো নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ।

তালহা বিন উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন এই দোয়া পড়তেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১)

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *