সোমবার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে এবং পুলিশের বলপ্রয়োগের প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার (১৩ অক্টোবর) থেকে সারাদেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করছেন শিক্ষকরা। 

রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী।

এর আগে দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষকদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও লাঠিচার্জের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশি বাধার মুখে শিক্ষকরা পরে শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। সেখানে থেকেই তারা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ সময় অবস্থানরত শিক্ষকদের সরাতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

রোববার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, পুলিশ শিক্ষকদের সরানোর জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষকরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের কারণে শিক্ষকরা সাময়িকভাবে সরলেও পরবর্তীতে পুনরায় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন। মাইকে শিক্ষক নেতারা সবাইকে শান্তি বজায় রেখে একত্রিত থাকার নির্দেশ দেন।

অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের অবস্থান কর্মসূচি এখন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলবে। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আলোচনার মাধ্যমে, সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন নিয়েই বিজয়ী বেশে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব। 

তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতার প্রজ্ঞাপন না হবে, ততক্ষণ আমরা শহীদ মিনার ছাড়ব না, ঢাকার রাজপথও ছাড়ব না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশ শিক্ষক নেতাদের সরে যেতে বললে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শিক্ষকরা আতঙ্কিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হন। পরে সংগঠনের নেতাদের আহ্বানে তারা মিছিলসহ শহীদ মিনারে সমবেত হন।

এর আগে শনিবার প্রেস ক্লাবের সামনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকরা সোমবারের মধ্যে ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি না হলে কর্মবিরতির আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। আজকের ঘটনার পর সেই কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে নতুন ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংগঠনটির নেতারা জানান, সরকারের ঘোষিত বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির হার ‘অপর্যাপ্ত ও অবাস্তব’। তারা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি এবং সর্বজনীন বদলি নীতির বাস্তবায়ন দাবি করেন।

এর আগে দুপুরে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে গেছেন অর্থ উপদেষ্টা ও সচিবের সঙ্গে আলোচনা করতে।

প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন- এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন, সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন আজিজী, যুগ্ম সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্য সচিব মো. আবু তালেব সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন হেলালী, যুগ্ম সদস্য সচিব আশরাফুজ্জামান হানিফ, যুগ্ম সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন, যুগ্ম সদস্য সচিব তোফায়েল সরকার, যুগ্ম সদস্য সচিব শান্ত ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ রাজু, যুগ্ম সদস্য সচিব প্রকৌশলী আবুল বাশার, যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং আজিজুর রহমান আজম।

লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আজ সকাল ১০টার দিকে আসতে শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এর আগে, গত ১৩ আগস্ট একই দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল সংগঠনটি। তারা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি এবং সর্বজনীন বদলির দাবি জানিয়েছিলেন। সেই সময় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্ধদিবস, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং বিভাগীয় শহরে শিক্ষক সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *