■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৪০৮ জন আর নিখোঁজ রয়েছেন ১৩৯ জন।
শনিবার (২৯ মার্স) দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বড় শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি পরাঘাত (আফটার শক) হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মিয়ানমারের মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর বাইরে যে পরিমাণ আর্থিক, পরিবেশগত এবং সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আর্থিক মূল্যে তার পরিমাণ ছাড়াতে পারে ১ হাজার কোটি ডলার।
এর আগে, শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে জরুরি বিভাগের বাইরে আহতদের সারি দেখা যায়। আহতদের অনেকেই দূর দূরান্ত থেকে গাড়ি এবং পিকআপে করে এসেছেন। পরবর্তীতে তাদের স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। যাদের গায়ে ধুলো ও রক্ত মাখা ছিল।
ভূমিকম্পে হাসপাতালও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগটিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হাসপাতালে প্রবেশপথে একটি গাড়ি চাপা পড়েছে।
এএফপিকে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, ‘অনেক আহত মানুষ আসছেন। আমি এর আগে এমন কিছু দেখিনি। আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি খুব ক্লান্ত।’
এদিকে, আহতদের দেখতে মিয়ানমারের সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইং হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
মান্দালয় শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এটি মিয়ানমারের প্রাচীন রাজকীয় রাজধানী এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্র।
মিয়ানমার ছাড়াও প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন। দেশ দুটিতে হতাহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, বিশেষত মিয়ানমার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার জানা যায়নি। কেননা, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে ও সেখান থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটি। ২০১১ সালে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন এবং শতাধিক ভবন ধ্বংস হয়েছিল।
মিয়ানমারে ২০২১ সালে নির্বাচিত অং সান সু চি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা। এর পর থেকে দেশটি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সংঘাত চলছে। বর্তমানে দেশটির বড় অংশ দখলে রয়েছে এই বিদ্রোহীদের। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের ৩০ লাখের বেশি মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত। আর দেশটির এক–তৃতীয়াংশের বেশি মানুষের ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন।