■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঐক্যের ডাক দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
তারা বলেন, ‘মুজিববাদী সংবিধান বাতিল ও রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর (মো. সাহাবুদ্দিন) অপসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য চাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, ‘কোনো ফ্যাসিস্ট রেজিমের কোনো অংশ বাংলাদেশে বিরাজমান দেখতে চাই না আমরা। এর ফয়সালা রাজনৈতিকভাবে করতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না, ছলচাতুরীর আশ্রয় নেবেন না। বাংলাদেশ রক্ষার জন্য আমরা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমের অংশ চুপ্পুকে অপসারণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হন এবং রাজনৈতিক সংকটগুলো মোকাবিলা করুন।’
‘কোনো রাজনৈতিক দল যদি ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশ চুপ্পুকে সরানোর আন্দোলনে না আসে, আমরা তাদের ত্যাগ করে জনগণের ঐক্যবদ্ধ যে শক্তি সেই শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি স্পষ্ট করে বলতে চাই, চুপ্পু যদি অপসারণ না হয় তাহলেই সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে,’ যোগ করেন নাসীরুদ্দিন।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় পার্টি এবং অপ্রাসঙ্গিক দল বাদে প্রাসঙ্গিকভাবে যে দলগুলো রয়েছে, আমরা গণঅভ্যুত্থানে যে শক্তিটা রয়েছে তাদের জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করতে পেরেছিলাম, কিন্তু ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ বিলোপের প্রশ্নটি এখনও সমাধান হয়নি। যারা এই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল তারা কখনোই ৭২ এর সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না। কারণ এ সংবিধানের মাধ্যমেই এই ফ্যাসিবাদী কাঠামো সব সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সংঘবদ্ধ হয়েছে, প্রসারণ ও বৃদ্ধি ঘটেছে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসীন দেখতে চায়। তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, ৭২ এর সংবিধানের প্রশ্নে এবং আমাদের গণঅভ্যুত্থানের প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। কারণ, যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে তারা ৭২ এর সংবিধানের পক্ষে কোনোদিন থাকতে পারে না।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘সংবিধানে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট প্রাধান্য পাবে এবং কখনোই ফ্যাসিবাদ কাঠামো জেঁকে বসার জায়গা রাখা যাবে না। বাকশালী যে সংবিধান সেটি গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশে, ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আর কখনোই প্রাসঙ্গিক নয়। আমরা গণতন্ত্রকামী যত রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের ঐক্য চাচ্ছি। এই ঐক্যের মধ্যদিয়ে আমরা নতুন করে সংবিধান লিখব। সেই সংবিধানে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। ৭২ এর সংবিধান বাতিল হলে চুপ্পুর ধারাবাহিকতার প্রশ্নটি আর থাকে না। আমরা যে ৫ দফা দিয়েছি, সেই দফাগুলোই হলো গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবে পরিণত করার চূড়ান্ত দফা।’
নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, কোনও রাজনৈতিক দল যদি আমাদের জাতীয় ঐক্যে না আসে তাহলে আমরা তাদেরকে বাদ দিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্য গড়ে তুলে ফ্যসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে তার সমাধান করব। আমরা এখনো বঙ্গভবনে স্বৈরাচারদের দেখতে পাচ্ছি। আমরা দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে এই বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, গণতান্ত্রিকামী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য চাচ্ছি আমরা। আমাদের ঘোষিত ৫ দফা গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের জন্য বিপ্লবে পরিণত হবে।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘৭২-এর মুজিববাদী সংবিধান বাতিল ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের’ দাবিতে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং জাতীয় পার্টি ছাড়া সব রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দিতে আহ্বান জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, কোনো দল যদি বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল ও রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে না আসে তাহলে সে দলকেও আমরা বয়কট করবো ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে। আমরা বাহাত্তরের পচা-গলা সংবিধান মানবো না। বাহাত্তরের সংবিধান থাকলে রাজনৈতিক সংকট থাকবে দূর হবে না।
বঙ্গভবন ঘেরাও নিয়ে হাসনাত বলেন, আমাদের দাবি রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ। তবে এ ধরনের আন্দোলন আমরা চাই না। আমরা এরই মধ্যে তাদের (বঙ্গভবন ঘেরাওকারীদের) সঙ্গে কথা বলেছি। যারা আন্দোলনে আছেন তাদের প্রতিও আহ্বান জানাবো, আপনারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর আস্থা রাখুন। আমরা একসঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে আবারও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব।
নাগরিক কমিটি বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ বিষয়ে নাগরিক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আমরা রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা কোনো গোলটেবিল আলোচনা চাই না। আমরা রাজপথে বিশ্বাসী, রাজপথে থেকেই সমাধান করতে চাই। রাজপথে থেকে হাসিনা পালিয়েছে, রাজপথেই সিদ্ধান্ত হবে চুপ্পু কোথায় যাবে। রাজনৈতিক কোনো দল যদি কোনো ইনডোর রুমে বসে সিদ্ধান্ত নিতে চায় তবে আমরা রাজপথে থেকেই সেটার সমাধান করব।