■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে নির্বাচনী জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
রোববার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আরও দুটি দল যুক্ত হয়েছে। একটি কর্নেল অলির নেতৃত্বাধীন এলডিপি ও অপরটি এনসিপি।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা আট দল অনেক দিন ধরে একসঙ্গে আন্দোলন করে আসছি। এখন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং কর্নেল অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন এলডিপি। আমাদের আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত, কিছু আলোচনা বাকি আছে। সেগুলো আশা করি শিগগির শেষ হবে। এরপর আমরা ঘোষণা করব।’
জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের আলোচনা আজকে সমাপ্ত হয়েছে। তাঁরা এখানে আসার সুযোগ পাননি। তাঁরা রাতে একটি প্রেস কনফারেন্স করে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।’
জামায়াত আমির আরও বলেন, ‘আমাদের আসন সমঝোতা অলমোস্ট কমপ্লিট। সামান্য যা বাকি আছে, তা আলোচনার ভিত্তিতে আমরা সুন্দরভাবে শেষ করতে পারব আশা করি।’
এর আগে বিকেলে ঢাকা-১৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে অংশীজন দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আসন সমঝোতার মাধ্যমে জোটের মাধ্যমে ভোটে অংশ নিচ্ছি। অন্যান্য দলের সঙ্গে খেলাফত মজলিস, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এনসিপি থাকবে।’
১০ দলের মধ্যে আসন বণ্টন কীভাবে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই সবার হাতে আসন তুলে দেব। যার যে যোগ্যতা, তার ভিত্তিতেই আসনগুলো তুলে দেব। খুব শিগগির আসন ঘোষণা করা হবে।’
সুষ্ঠু ভোটের জন্য জোট কঠিন ভূমিকা রাখবে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, এখন জাতি একটা দীর্ঘ স্থায়ী মুক্তির দিকে এগোতে চায়, শান্তির দিকে এগোতে চায়, একটা সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। আমাদের যুবসমাজের যে প্রত্যাশা, যেটার জন্য বুক চিতিয়ে তারা লড়াই করেছিল, জীবন দিয়েছিল; তাদের প্রত্যাশা পূরণ এখন আমাদের দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, আর যারা লড়াই করতে গিয়ে আহত বা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা এবং আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সুস্থতার নিয়ামত দান করুন। এত মানুষের লড়াই, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজ জাতি যে জায়গায় এসে উপনীত হয়েছে, ঠিক দেড় মাসের চাইতেও কম সময় আমাদের হাতে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে, গ্রহণযোগ্য করতে, আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা চাই নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা হয়েছে তার কোনো হেরফের না হোক, এই তারিখেই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হোক। এ ব্যাপারে আপনাদেরও সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। আমরা আশা করছি, সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাদের যে করণীয়, নির্বাচন কমিশন এবং সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে। এখনো তাদের অনেক কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এখনো সমতল মাঠ তৈরি হয়নি সকলের জন্য। সেই মাঠ তৈরির কাজ হচ্ছে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের। তারা যেকোনো ধরনের লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি এবং কারো প্রতি কোনো ধরনের আনুকূল্যের ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করবেন। এটা সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব। আমরা এবং জাতি তাদের কাছে এটিই প্রত্যাশা করি, এর যেকোনো ধরনের ব্যতিক্রম এই জাতি মানবে না।
তিনি বলেন, এই ব্যতিক্রমটাই তো আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো বছর কেড়ে নিয়েছে। তিন তিনটা নির্বাচনে এখানে যারা উপস্থিত, আমি বিশ্বাস করি অধিকাংশ আপনারা কোনো ভোটই দিতে পারেন নাই। আমরা তো জীবনে দুই-চারবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আপনারা পানই নাই। এভাবে আমাদের ভোটের অধিকার হরণ করে নেওয়া হয়েছিল। আগামীতে আমরা ওই ধরনের কোনো প্রক্রিয়া কেউ করতে গেলে কোনো অবস্থায় বরদাস্ত করব না। আপনাদের ভোটের জন্য, সকলের ভোটের জন্য আমাদের লড়াই হবে। একেবারে ইস্পাত কঠিন এই ঐক্য জাতীয় ঐক্য হবে। আপনাদের সাথে মিলেমিশে, এই জেনারেশনের সাথে মিলেমিশেই আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে চাই।
নির্বাচনী জোট নাকি আন্দোলন-সংগ্রামও এই জোটে চলবে– এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, জোট বলুন আর না বলুন, আমরা কিন্তু জোটের চাইতেও আরও মজবুত, আরও ঐক্যবদ্ধ। এটা নিয়ে আমরা এগোবো। আপনাদের সহযোগিতা আমাদের সাথে থাকবে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে, দ্বীনের স্বার্থে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এটা দেশ গঠনের জোট, এটা নির্বাচনের জোট, এটা রাজনৈতিক জোট, এটা সকল ধরনের … ওই জোট বলেন আর সমঝোতা বলেন যাই বলেন, এটা সবগুলা পারপাস কাভার করার জন্য। দলীয় কর্মসূচি যার যার অনেকগুলা থাকবে, তারপরে ন্যাশনাল ইস্যুতে যেখানেই প্রয়োজন আমরা একসাথে করব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকসহ জোটের অন্য নেতারা।
এনসিপির পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত না থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে ছিলেনসংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) অলি আহমদ, খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাগপা মুখপাত্র ও সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
