■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছে জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। এটি হিরোশিমা এবং নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি জাপানি সংস্থা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে বিজয়ী সংস্থার নাম ঘোষণা করা হয়।
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি বলেছে, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টা এবং পরমাণু অস্ত্র আর কখনো ব্যবহার করা যে উচিত নয়, সেটি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য জাপানের সংগঠনটিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সংগঠনটির সহ-প্রধান তোশিউকি মিমাকি (Toshiyuki Mimaki)। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সংগঠনটি যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবে, তা তিনি কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি।
জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে ১৯৪৫ সালে পারমাণবিক বোমা হামলা হয়েছিল। এই হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯৫৬ সালে নিহন হিদানকায়ো (Nihon Hidankyo) নামের সংগঠনটি গঠিত হয়।
নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট জানায়, এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২৮৬। এর মধ্যে ব্যক্তি ছিলেন ১৯৭ জন। আর প্রতিষ্ঠান ৮৯টি। শেষ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠান এবার শান্তিতে নোবেল পেল।
গত বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন ইরানের কারাবন্দী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি। দেশটিতে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৯০১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১১৪ বার নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ১১১ ব্যক্তি ও ৩০ সংস্থা মিলে পুরস্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১৪১। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি ১৯১৭, ১৯৪৪ ১৯৬৩ সালে তিনবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তর ১৯৫৪ ও ১৯৮১ সালে দুইবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া ২৭ স্বতন্ত্র সংস্থা নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং। প্রগাঢ় কাব্যিক গদ্যে ঐতিহাসিক ক্ষত তুলে ধরার জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
বুধবার (৯ অক্টোবর) রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার। এদের মধ্যে ডেভিড বেকার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার যুক্তরাজ্যের নাগরিক।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) পদার্থবিদ্যায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান মার্কিন বিজ্ঞানী জন জে হোপফিল্ড এবং কানাডার বিজ্ঞানী জিওফ্রে ই হিন্টন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মেশিন লার্নিং বিষয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তাদের এ অর্জন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) চিকিৎসাশাস্ত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন। মাইক্রোআরএনএর কার্যক্রম আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পান তারা।
প্রতি অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। ৮ অক্টোবর পদার্থবিদ্যা, ৯ অক্টোবর রসায়ন, ১০ অক্টোবর সাহিত্য, ১১ অক্টোবর সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা।
প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা ও অর্থনীতি- এই ছয় বিষয়ে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন; তাদের পুরস্কার প্রদান করে সুইডেনভিত্তিক নোবেল ফাউন্ডেশন। পুরস্কার প্রদানের পর তা উদযাপনে উৎসবের আয়োজন করে নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির সদর দফতর নরওয়েতে।
উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, আজকের বাজারে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। আলফ্রেড নোবেলের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬৮ সালে এই তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। প্রথম দিন ঘোষণা করা হয় চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল।
ছয়টি বিভাগে ছয় দিন নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়।
১৯৬৮ সাল থেকে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোবেলের অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে অবদানের কথা স্মরণ করে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু করে।
১৯০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে ১১৪টি নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। ২২৭ জন বিজয়ীর মধ্যে ১৩ জন ছিলেন নারী।
শুরুতে নোবেল বিজয়ীদের প্রায় দেড় লাখ ক্রোনা দেওয়া হতো। বাড়তে বাড়তে ১৯৮১ সালে তা ১০ লাখ ক্রোনা হয়। এরপর পুরস্কারের আর্থিক মূল্য দ্রুত বাড়ানো হয়। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো এর পরিমাণ ১ কোটি ক্রোনা হয়।
সর্বশেষ এ বছরের জানুয়ারি মাসে বাড়ানো হয় নোবেল পুরস্কারের আর্থিক সম্মানী। এ বছরের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা মোট ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (৯ লাখ ৮৬ হাজার ডলার) পাবেন, যা আগের চেয়ে ১০ লাখ ক্রোনা বেশি। নোবেল ফাউন্ডেশনের তহবিলের উন্নতি হওয়ায় এ বছর পুরস্কারের আর্থিক সম্মানী বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের তহবিলে টান পড়ায় ২০১২ সালে পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি ক্রোনা থেকে কমিয়ে ৯০ লাখ করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে ৯০ লাখ এবং ২০২০ সালে ফের এক কোটিতে উন্নীত করা হয়।
গত এক দশকে ইউরোর বিপরীতে প্রায় ৩০ শতাংশ দর হারিয়েছে সুইডিশ ক্রোনা। ফলে পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ লাখ ক্রোনা বাড়ানো হলেও সুইডেনের বাইরে তা ততটা বাড়বে না।
২০১৩ সালে আর্থিক সম্মানী কমিয়ে ৮০ লাখ ক্রোনা করা হয়। তখনো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রায় এই পুরস্কারের পরিমাণ দাঁড়াত ১২ লাখ ডলার। সেটা বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনা হলেও বিনিময় হারের খেলায় ২০২৪ সালে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ডলারের কম। মুদ্রাস্ফিতি বিবেচনায় নিলে নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্যমান খুব একটা বাড়েনি।
বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার মূল্যমান দাঁড়ায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার বেশি।