বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন ঠেকাতে ফিরছে ‘না’ ভোট

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন ঠেকাতে ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ।

সোমবার ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২, সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫’ চূড়ান্ত করার বিষয়ে ইসির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইভিএম প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে না। সেখানে না ভোট হবে। দুইজন প্রার্থী সমপরিমাণ ভোট পেলে লটারি নয় পুনরায় নির্বাচন হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে একটি, দুটি অথবা পুরো আসনের ফল নির্বাচন কমিশন চাইলে বাতিল করতে পারবে। এ ছাড়া ফলাফল ঘোষণার সময় সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।

এ বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, চূড়ান্ত আরপিওতে ব্যালটে ‘না ভোট’ থাকায় বিনা ভোটে আর কেউ বিজয়ী হতে পারবে না। কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে শুধু সেখানে ‘না ভোট’ থাকবে। নির্বাচনে না ভোট বিজয়ী হলে সেখানে পুনরায় তফসিল দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সমভোটের ক্ষেত্রে লটারি প্রথা বিলোপ করা হয়েছে। সমভোট হলে তাঁদের মধ্যে পুনরায় ভোট হবে। আরপিও থেকে আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-সংশ্লিষ্ট সব বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে পুরো আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে কমিশন। এ বিষয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, পুরো আসনের ভোট বাতিল করার ক্ষেত্রে কমিশনের ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছিল। এখন আবার পুরো আসনের ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা ইসির হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বিশেষ করে, পুলিশ ও প্রশাসনের বদলি তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন পর পর্যন্ত ইসির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রেঞ্জের ডিআইজিদেরও আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দল ও প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অনুদান নিতে পারবে। তবে তা ব্যাংকের মাধ্যমে নিতে হবে এবং যার বা যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান নেওয়া হবে, তাদের আয়কর নথিতে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলাজনিত শাস্তিগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্তের ফলাফল কমিশনকে জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত এসিআরে তাঁর শাস্তির বিষয়টি সংরক্ষণ থাকবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের মিথ্যাচার বা অপবাদ ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এআই শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কমিশন সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ও গুজব রোধে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে, যেখানে ভালো তথ্যের মাধ্যমে খারাপ তথ্য দমন করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, এটার মাধ্যমে এই প্রবণতাটাকে ঠেকাতে পারব।’

নির্বাচনে নারীর প্রতি সম্মান ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধের বিষয়টি আচরণবিধিতে যুক্ত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ ও কার্যক্রম স্থগিতকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে কমিশন স্থগিত করার ক্ষমতা ব্যবহার করবে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিধান স্পষ্ট করে আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় সাংবাদিকেরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে সেখানে থাকতে হলে পুরো সময় থাকতে হবে। অর্ধেক থেকে বের হওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।

সংসদীয় আসনের খসড়ার ওপর আপত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ৮২টি আসন থেকে দাবি-আপত্তি পাওয়া গেছে। পরে এগুলো শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হবে।

তিনি আরও জানান, এবার ১৪৩টি নতুন দল থেকে আবেদন করেছিল। আবেদন করা কোনো দলই পুরোপুরি শর্ত পূরণ করতে পারেনি। পরে ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দিয়েছিল কমিশন। যার মধ্যে ৮৪টি দল তাদের ঘাটতি পূরণ করে ইসিতে জমা দেয়। ৫৯টি দল কোনো সাড়া দেয়নি। ৮৪ দলের মধ্যে ২২টি দল তাদের ঘাটতি তথ্য দিতে সামর্থ্য হয়েছে। তাদের বিষয়ে এখন মাঠপর্যায়ে খোঁজ নেবে ইসি।

টিকে গেল যে ২২ দল

ফলোয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি ও নতুন বাংলাদেশ পার্টি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *