■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
নিজের কাম্পাসে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৫ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান ওই আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক চাঁদ মিয়া আসামিকে আদালতে হাজির করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জানান, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী কুরআন পদদলিত করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। পরে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন আদালত।
কারাগারে আটক রাখার আবেদন দাখিল করে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। ঘটনায় জড়িত মর্মে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও বিষয়টি সে স্বীকার করেছে।
সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পরবর্তী সময়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে। এমতাবস্থায় আসামিকে কারাগারে আটক রাখা আবশ্যক।
আদালতে শুনানির সময় আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করা হলে তা নাকচ করে কারাগার পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
শনিবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
জানা গেছে, অপূর্ব পাল ক্লাসরুমের বাইরে বসে ইচ্ছাকৃতভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ মাটিতে রেখে, তাতে লাথি মেরে এবং এর পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে একটি ভিডিও ধারণ করে। এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার পরপরই আশেপাশের শিক্ষার্থীরা গভীর ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং তার সাথে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে নেয়।
এদিকে শিক্ষার্থীরা আরও জানিয়েছে, শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কোরআন অবমাননার কিছু ভিডিও পোস্ট করা হয়। এরপরই তা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার শাস্তি দাবি করতে থাকেন বিভিন্ন মানুষ। একপর্যায়ে রাতে একদল ছাত্র-জনতা ওই শিক্ষার্থীর বাসার নিচে গিয়ে শাস্তির দাবিতে দাবিতে বিক্ষোভ করে। পরে রাত ৩ টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাকে রক্ষায় গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে, কোরআন অবমাননার অভিযোগে কারাগারে যাওয়া অপূর্ব পালকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।
তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফ সন্ধ্যায় বলেন, “অভিযোগ ওঠা শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
“শৃংঙ্খলা কমিটির এক জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্তও হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শনিবার অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে পবিত্র কোরআন অবমাননারত অবস্থায় প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখতে পান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা বিভাগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
“এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের পরিবেশ প্রশংসনীয়ভাবে রক্ষা করেছেন।”
অপূর্ব নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি আগেও সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন একই বিভাগের প্রভাষক আসিফ বিন আলী।