■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) সম্পন্ন হয়েছে। পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারের জন্য তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি এখনও নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বলেন, পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারের জন্য শরিফ ওসমান হাদিকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ারে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে ঢামেক থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফর জানান, হাদির অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়- বরং অত্যন্ত সংকটজনক। আবু জাফর বলেন, ওসমান হাদির মাথার ডান কানে গুলি ঢুকে বাম দিকে বেরিয়ে গেছে। ব্রেনে বড়সড় ক্ষতি হয়েছে। বুলেট ইনজুরি সাধারণত যেখানে ঢোকে সেখানে ছোট ক্ষত থাকে, আর যেখানে বের হয়, সেখানে বড় ক্ষতি হয়। হাদির ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় আশঙ্কা ব্রেন ফুলে যাওয়ার ঝুঁকি। ব্রেন ফুলে গেলে ভয়াবহ বিপদ হতে পারে। প্রেশার বেড়ে গেলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। এ কারণে নিউরোসার্জন ডা. জাহিদ রায়হান ও তার টিম ব্রেনের খুলির বড় একটি অংশ খুলে দিয়েছেন, যেন ভেতরে চাপ না বাড়ে।
হাদিকে হাসপাতালে আনার সময় তার গ্লাসগো কোমা স্কোর (জিসিএস) ছিল সর্বনিম্ন ৩। চিকিৎসকদের দ্রুত পদক্ষেপে সেটায় কিছুটা উন্নতি এসেছে। এখন তিনি আর্টিফিশিয়াল ভেন্টিলেশনে আছেন।
জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট রোড এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকে) নেওয়া হয়।
ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ তিনটি মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে বলে জানান তিনি।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসকরা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনার পর ওসমান হাদির অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। শকে চলে যাওয়ায় দ্রুত সিপিআর দেওয়ার পর সাময়িকভাবে রক্তচাপ কিছুটা স্থিতিশীল হয়।
ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, গুলিবিদ্ধ শরীফ ওসমান বিন হাদির অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। মাথার ভেতরেই বুলেটটি রয়েছে।’এরপরও পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুতর বলে বর্ণনা করেছেন চিকিৎসকেরা। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো তার চিকিৎসায় সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এদিকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওসমান হাদির গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ইস্রাফিল ফরায়েজী জানান, নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁকে গুলি করা হয়।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় শরিফ ওসমান হাদির পেছনের রিকশায় ছিলেন মো. রাফি। তিনি হামলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘জুমার নামাজ শেষে আমরা হাইকোর্টের দিকে আসছিলাম। রিকশায় ছিলাম। বিজয়নগর আসতেই একটা মোটরসাইকেলে করে দুজন এসে হাদি ভাইয়ের ওপর গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। আমি ভাইয়ের পেছনের রিকশায় ছিলাম।’
এদিকে হাদির সমর্থকরা হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে উৎসুক জনতাও ভিড় করছেন।
হাদির সমর্থকরা জানান, নভেম্বর মাসে দেশি-বিদেশি ৩০টি নম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন হাদি।
এর আগে বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে হাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, ‘যেহেতু ঢাকা-৮ এ আমার পোস্টার-ফেস্টুন কিছুই নাই, তাই আমার এখন ছেঁড়া-ছিঁড়িরও চাপ নাই। দুদকের সামনে থেইকা জুম্মা মোবারক।’পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ডিআর টাওয়ারের সামনে গুলির জায়গাটি ঘিরে রাখা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গেছেন একই আসনের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি চারটার দিকে ঢামেকে যান।
এদিকে সেখানকার নিরাপত্তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে
