হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা ফেরত এসেছে

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাথায় গুলিবিদ্ধ ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা হাদির চিকিৎসায় বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ১৫ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয়েছে।

এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. আরিফ মাহমুদ শনিবার বলেন, ‘হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে মিডিয়া ব্রিফের চেয়ে তার চিকিৎসার দিকেই আমাদের মনোযোগ বেশি। তার ভাই তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। হাদির বর্তমান অবস্থা তার পরিবারকে আমরা ব্রিফ করেছি।’

মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, রোগীর মস্তিষ্ক ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। তাকে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখা হয়েছে। ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল (স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের আঘাতের পর মস্তিষ্ককে আরও ক্ষতি থেকে বাঁচাতে বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি ও যত্ন) অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা চালু থাকবে। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে আবার ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হতে পারে। হাদির ফুসফুসেও আঘাত রয়েছে। চেস্ট ড্রেইন টিউব (বুকের ভেতর থেকে বাতাস, রক্ত বা অন্যান্য তরল বের করতে ব্যবহৃত নমনীয় নল) দিয়ে অল্প পরিমাণ রক্ত নির্গত হওয়ায় তা চালু রাখা হয়েছে। ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস (তীব্র শ্বাসকষ্ট সিন্ড্রোম ফুসফুসের একটি গুরুতর অবস্থা) প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট অব্যাহত রাখা হবে।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ অ্যান্ড এইচডিইউ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. জাফর ইকবাল। তিনি জানান, হাদিকে শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে অপারেশনের পর এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় অপারেশন-পরবর্তী চিকিৎসার জন্য।

বিবৃতিতে ১১টি পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরে মেডিকেল টিম। সেগুলো হলো— 

১. হাদির ব্রেন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে সেহেতু এখন কনজার্ভেটিভভাবেই ম্যানেজ করতে হবে। ব্রেন প্রোটেকশন প্রোটোকল ফলো করে অন্যান্য সব সাপোর্ট চালিয়ে যেতে হবে। যদি একটু স্টেবল হয় তাহলে ব্রেনের রিপিট সিটি স্ক্যান করানো যেতে পারে। 

২. ফুসফুসে ইনজুরি আছে ও চেস্ট ড্রেইন টিউবে যেহেতু অল্প ব্লাড আসছে সেহেতু সেটা কন্টিনিউ করতে হবে। ফুসফুসে সংক্রমণ ও এ আরডিএস যাতে ডেভেলপ না করে সেদিকে খেয়াল রেখে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট চালিয়ে যেতে হবে। 

৩. কিডনির কার্যক্ষমতা ফেরত এসেছে, সেটা ধরে রাখার জন্য ফ্লুইড ব্যালেন্স যেভাবে ঠিক রাখা হচ্ছে সেভাবেই কন্টিনিউ করতে হবে।

৪. শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণ হওয়ার মধ্যে যে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিয়েছিল (ডিআইসি) সেটা অনেকটাই ঠিক হয়ে এসেছে। এটাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে রক্ত ও রক্তের বিভিন্ন উপাদান ট্রানফিউস করতে হবে। 

৫. ব্রেন স্টেমে ইনজুরির কারণে ব্লাড প্রেসার ও হার্ট বিট ওঠানামা করছে। ব্লাড প্রেসারের জন্য সাপোর্ট যেভাবে দেওয়া আছে সেটা সেভাবেই চলবে। যদি হার্ট রেট কমে যায় তাহলে টেম্পোরারি পেস মেকার লাগানোর জন্য টিম সার্বক্ষণিক রেডি আছে, সেটা লাগানো হবে।

৬. ঢাকা মেডিকেল কলেজের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে, রেডিওলজি, আইসিইউ, এনেসথেসিয়া, সমস্ত ইউরো সার্জারিসহ ও অন্যান্য ডিসিপ্লিনের চিকিৎসকরা ও সাপোর্টিভ স্টাফরা যে হিরোইক কাজ করেছেন তার জন্য এই মেডিকেল বোর্ড সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।

৭. বর্তমানে তার সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। 

৮. মেডিকেল বোর্ড সামারিটি রোগীর ভাই ও তার আপনজনকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা চাইলে মিডিয়ার মাধ্যমে তার আপডেট দেশবাসীকে জানাতে পারেন। মেডিকেল টিমের পক্ষ থেকে হাদির জন্য বিনীতভাবে দোয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

৯. অযথা কেউ হাসপাতালে এসে ভিড় করবেন না। কোনো ভিজিটির এখানে এলাউড না।

১০. আমরা আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি কোনো অনুমান বা ভুল তথ্য প্রচার না করে মেডিকেল বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখুন। রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষায় সবাই সহযোগিতা করুন। 

১১. আমাদের মেডিকেল টিম সর্বোচ্চ পেশাদারি ও আন্তরিকতার সঙ্গে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য মেডিকেল বোর্ড ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে দোয়া করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ তিনটি মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে বলে জানান তিনি।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসকরা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনার পর ওসমান হাদির অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন। 

দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। শকে চলে যাওয়ায় দ্রুত সিপিআর দেওয়ার পর সাময়িকভাবে রক্তচাপ কিছুটা স্থিতিশীল হয়। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *