■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফর।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি এ তথ্য জানান।
দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত শরিফ ওসমান বিন হাদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হাদিকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছায়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন, বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বুলেট হাদির মস্তিষ্কের কাণ্ড বা ব্রেন স্টেম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হিসেবে বিবেচিত। আগামী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, আর এ অবস্থায় কোনো ধরনের নতুন ইন্টারভেনশন করা হবে না।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির শারীরিক অবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, হাদি এখন ‘খুবই ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায় আছেন এবং আগামী ৭২ ঘণ্টা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাকে আপাতত কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে রাখা হয়েছে, যদিও চিকিৎসকেরা এখনো আশার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।
শরিফ ওসমান হাদির অর্গান কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।
শুক্রবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
আশা করি আর অপারেশন করা লাগবে না উল্লেখ করে ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী ডা. তাসনিম জারা বলেন, একটা অপারেশন হয়েছে। হাসপাতালের বোর্ড বিস্তারিত জানাবেন। উনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন, অবস্থা সংকটাপন্ন। এ সময় তিনি কাউকে হাসপাতালে ভীড় না করার আহ্বানও জানান। আজকের ঘটনায় প্রশাসনকে দায়ভার নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের যারা সম্মুখ সারিতে ছিলেন, তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এটাও প্রশাসনের ব্যর্থতা। তাদেরকেই এর জাববদিহিতা করতে হবে। আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে, ওসমান হাদির ওপর যারা গুলি চালিয়েছে, তারা প্রায় ২ সপ্তাহ আগে তার প্রচারণার টিমে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের একজন সদস্য।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুইজনের মধ্যে থেকে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি চালায়। এই দুজন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওসমান হাদির প্রচারণার টিমে যোগ দিয়েছিল। মাঝখানে কিছুদিন তাদের দেখা যায়নি। কয়েকদিন আগে তারা আবার এসে প্রচারণার কাজে যোগ দেয়।
পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ঘটনার বিষয়ে ভিডিও এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মকর্তা জানান, তারা সব তথ্য যাচাই করে দেখছেন।
জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ তিনটি মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে বলে জানান তিনি।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসকরা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনার পর ওসমান হাদির অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। শকে চলে যাওয়ায় দ্রুত সিপিআর দেওয়ার পর সাময়িকভাবে রক্তচাপ কিছুটা স্থিতিশীল হয়।
