■ গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ■
গোপালগঞ্জে হামলা-সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা কারফিউ শিথিলের পর ১৪৪ ধারাও বলবৎ না থাকার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আজ রাত আটটার পর গোপালগঞ্জ জেলায় ১৪৪ ধারা ও কারফিউ বলবৎ থাকবে না। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে গতকাল শনিবার রাতে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে কারফিউ শিথিল করে আজ সকাল ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছিল জেলা প্রশাসন।
গত বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। পরে পরিস্থিতি অবনতির কারণে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়।
পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রথম দফায় কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত করেন। এর মধ্যে শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় কারফিউর মেয়াদ বাড়িয়ে গতকাল সকাল ছয়টা পর্যন্ত কার্যকর রাখা হয়। এরপর ১৪ ঘণ্টা শিথিল রেখে রাত আটটা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ চারটি হত্যা মামলা করেছে। গতকাল শনিবার রাতে সদর থানার চারজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মামলাগুলো করেন।
চারটি মামলায় কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা মোট ৫ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোতে দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ১৫৩, ৩০৭, ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানায় পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন হত্যা মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
গোপালগঞ্জে সংঘাত-সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জ পৌরসভার উদয়ন রোডের বাসিন্দা দীপ্ত সাহা (২৫), জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোহেল রানা মোল্লা (৩৫), কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি ইউনিয়নের হরিণাহাটি গ্রামের রমজান কাজী (১৮), ভেড়ার বাজার ব্যাপারীপাড়া এলাকার ইমন তালুকদার (১৮) ও থানাপাড়া এলাকার রমজান মুন্সী (৩৫)।
এর মধ্যে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোহেল হত্যা হামলার বাদী এসআই আবুল কালাম আজাদ, দীপ্ত সাহা হত্যা মামলার বাদী এসআই শামীম হোসেন, ইমন হত্যা মামলার বাদী এসআই শেখ মিজানুর রহমান। এই তিন হত্যা মামলার প্রতিটিতে অজ্ঞাতনামা দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে রমজান কাজী হত্যা মামলা করেন এসআই মো. আইয়ুব আলী। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ৯০০ জনকে। তবে রমজান মুন্সীর মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
এর আগে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে অভিযোগে মোট চারটি মামলা করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করে পুলিশ। চারটি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনায় গত বুধবার থেকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩২১ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, সদর থানায় নতুন ৯ জনসহ মোট ১০১ জন, কাশিয়ানীতে ৭৭ জন, মুকসুদপুরে ৮৮ জন, টুঙ্গিপাড়ায় ২৭ জন ও কোটালীপাড়ায় নতুন ছয়জনসহ মোট ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত বুধবার এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান।