■ অনিতেশ চক্রবর্তী ■
মুসলিম সন্ত্রাসবাদ একটা ধাঁধা। তারা কেন, কখন, কী করে, কাদের সুবিধা করে দেবে বলে করে, তা আজও ভালো বুঝিনি। বহির্বিশ্বের কথা আজ থাক, সে খুবই জটিল আলোচনা। কোনটা সত্যি, কোনটা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, কোনটা আধাসত্যি– ভাবতে বসলে গুলিয়ে যায়। তবে, যারা আজ পহেলগাঁওতে প্রায় জনা তিরিশেক হিন্দু পর্যটককে (একজন স্থানীয় মুসলিম মানুষকেও) গুলি করে মারল, তারা আসলে কাদের উপকার করল, সেটা সত্যিই ধাঁধা। স্থানীয় মানুষদের তো নয়। পর্যটন ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষ ফের রসাতলে যাবেন।
ভারতে থাকা কাশ্মীর ভূখণ্ডের কোনো সাধারণ মানুষ, পরিবার, সংস্থা, সংগঠনের কোনো উপকার এতে হল বলে মনে হয় না। এমনকি, যে ছায়া সংগঠনটা ওই হত্যাকারীরা করে, তারও কোনো উপকার সম্ভবত এতে হবে না। ইতিমধ্যেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সবাই পালিয়ে গেলে ভালো। নাহলে, ভারতীয় সেনা, আধা সেনা আজ না হোক কাল সবাইকেই মেরে ফেলবে। সঙ্গে আরও অনেককে। এমন অনেককেও সম্ভবত, যারা এই কাজে জড়িয়েও ছিলেন না। এবং, এরপর, কাশ্মীরে মিলিটারি-রাজ সম্ভবত আরও বেশ কয়েক গুণ হারে বাড়বে। তাতেই বা ওই জেহাদি সংগঠনের কী লাভ, কে জানে! যে সংগঠনটা তারা করে, সেটাই সাময়িকভাবে গোপন ঘাঁটি থেকে ভ্যানিশ হয়ে যেতে পারে। স্থানীয় মানুষদের সহানুভূতি পাওয়াও চাপ আপাতত। কারণ, ঘটনাটা ভয়াবহ। আর আক্রমণ ঘটেছে সাধারণ পর্যটকদের ওপর। সেনাদের ওপর নয়। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। নানা কারণেই।
আমি কাশ্মীর গিয়ে দেখেছি, রাস্তায় ফুলকপি কিনতে গেলেও সেনা দাঁড়িয়ে থাকে। মাথাপিছু পনেরো জনে একজন সেনা সম্ভবত। পৃথিবীর প্রথম বা দ্বিতীয় সেনাবহুল এলাকা। তারপরেও এহেন ঘটনায় কোনো সেনার হস্তক্ষেপ ঘটে না। খুবই আশ্চর্য। এমনিতে আমি সেনার হস্তক্ষেপের সমর্থক নই। এই যুক্তিতে সেনাকে, মিলিটারি স্টেটকেই সাবস্ক্রাইব করা হয়। কিন্তু তাও এক্ষেত্রে একটু রাগই হচ্ছে। হোয়াট-অ্যাবাউট্রি করছি হয়তো। কিন্তু সত্যিই কোনো সেনা আশপাশে ছিলেন না! আশ্চর্য!
ভেবে তাই আশ্চর্যই লাগছে। নেহাতই জেহাদ, নেহাতই ত্রাস সৃষ্টির তরে এমন বোকামি? কী বোকা সংগঠন! কী বোকা সব খুনির দল! কারা এদের মাথা! সামান্য চতুরতা থাকলেও এমন ভুল কেউ করে না। জেহাদ হোক বা অন্য কিছু, আসলে তো রাজনৈতিক সংগঠন। পথটা জেহাদের। পথটা ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের। কিন্তু ভিত তো রাজনীতিরই। এই সংগঠনকে তো বিশ্বের অনেক তালেবর যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। কয়েক লক্ষ কোটি ডলার তাদের পিছনে সামনে নানা উদ্দেশ্যে বরাদ্দ। কতগুলো দেশের অর্থনীতি, বিদেশনীতির দড়ি এই সংগঠনের টিকি-দাড়ি-লেজে বাঁধা। এমন একটা আন্তর্জাতিক এক্সপোজার প্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের এমন বোধবুদ্ধি! প্রকৃতঅর্থেই আত্মঘাতী যাকে বলে।
আশ্চর্য আসলে অনেককিছুই। নানা খবরে পড়লাম, দেখলাম– অকুস্থলের আশপাশেও কোনো সেনা, আধাসেনা, পুলিশের নামগন্ধও ছিল না। আততায়ীরা নিশ্চিন্তে এসে রীতিমতো ইন্টারভিউ নিয়ে, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে মানুষ মেরেছে। কমবেশি একশো রাউন্ড গুলি চলেছে। উপত্যকা কাঁপিয়ে গুলির আওয়াজ অনেক দূর অবধি শোনাও গেছে। কিন্তু এসব ঘটার মাঝে কোনো সেনা অকুস্থলে কাউকে বাঁচাতে আসেননি। তারা অনেক দূরে ছিলেন। অনেক দূরে…
আরও আশ্চর্য হল, ভারতের বিখ্যাত ইনটেলিজেন্স এসবের কিছুই বোঝেনি। ছজন জঙ্গি প্রকাশ্য দিবালোকে পহেলগাঁও বেসক্যাম্পের কয়েক কিমির মধ্যে একে-৪৭ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, রেকি করছে- এর সামান্য আঁচও পায়নি। কী সরল ইনটেলিজেন্স! কয়েক বছর আগে পুলওয়ামাতেও এমন সারল্য অনেকগুলো জওয়ানের প্রাণ নিয়েছিল। আজ ফের নিল। এবারে সিভিলিয়ান।
আমি কাশ্মীর গিয়ে দেখেছি, রাস্তায় ফুলকপি কিনতে গেলেও সেনা দাঁড়িয়ে থাকে। মাথাপিছু পনেরো জনে একজন সেনা সম্ভবত। পৃথিবীর প্রথম বা দ্বিতীয় সেনাবহুল এলাকা। তারপরেও এহেন ঘটনায় কোনো সেনার হস্তক্ষেপ ঘটে না। খুবই আশ্চর্য। এমনিতে আমি সেনার হস্তক্ষেপের সমর্থক নই। এই যুক্তিতে সেনাকে, মিলিটারি স্টেটকেই সাবস্ক্রাইব করা হয়। কিন্তু তাও এক্ষেত্রে একটু রাগই হচ্ছে। হোয়াট-অ্যাবাউট্রি করছি হয়তো। কিন্তু সত্যিই কোনো সেনা আশপাশে ছিলেন না! আশ্চর্য!
হয়তো, জেহাদি খুনিরা জানত যে সেনা থাকবে না। কিন্তু কীভাবে জানত? সেনা কি তার মানে স্ট্যাটিক? কোথাও থাকে আর কোথাও থাকেই না? নাকি অন্য কারণে আগাম জানত? কী আশ্চর্য!
আরও আশ্চর্য হল, ভারতের বিখ্যাত ইনটেলিজেন্স এসবের কিছুই বোঝেনি। ছ’জন জঙ্গি প্রকাশ্য দিবালোকে পহেলগাঁও বেসক্যাম্পের কয়েক কিমির মধ্যে একে-৪৭ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, রেকি করছে- এর সামান্য আঁচও পায়নি। কী সরল ইনটেলিজেন্স! কয়েক বছর আগে পুলওয়ামাতেও এমন সারল্য অনেকগুলো জওয়ানের প্রাণ নিয়েছিল। আজ ফের নিল। এবারে সিভিলিয়ান।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্য হল, যে-ঘটনায় দেশের সরকার, তার অধীনস্থ ইনটেলিজেন্স, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মুন্ডুপাত হওয়া উচিত, সেই ঘটনায় সরকারি দলেরই ভোট বাড়ে। তাদের পক্ষেই জনমত তৈরি হয়। তাদের বীরত্ব আর কৃতিত্ব ফলাও প্রচারের জন্য নানা ওয়েব সিরিজ তৈরি হয়। যাদের ব্যর্থতায় লোক মরল, তাদের বীর বানিয়ে গপ্পো তৈরি হয়। এই ঘটনাতেও সম্ভবত সেটাই হবে। তবে কি, ওই জেহাদি মুসলিম সংগঠনটাও চায় দেশে বি জেপির রাজ টলোমলো অবস্থায় বারবার পায়ের তলায় জমি ফিরে পাক! চাইলে কেন চায়? এও এক আশ্চর্য ধাঁধা।