■ কূটনৈতিক প্রতিবেদক ■
কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ইসহাক দারের সফর স্থগিতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২৭-২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করতে পারছেন না। পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে সফরের নতুন তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।
কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে চলমান পরিস্থিতির কারণে আগামী ২৭-২৮ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করতে পারবেন না মর্মে ঢাকাকে অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় উভয়পক্ষের সম্মতিতে যত দ্রুত সম্ভব ইসহাক দার ঢাকা সফর করবেন।
সম্প্রতি ঢাকা সফর করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। তার সফরকালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রায় ১৫ বছর হওয়া পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়।
আগামী ২৮ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ইসহাক দারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা ছিল। ওইদিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সৌজন্য সাক্ষাতের কথা ছিল।
গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে। তারা বলছে, পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। যদিও পাকিস্তান হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে এজন্য ইসলামাবাদকে দোষারোপ করারও প্রতিবাদ করেছে।
পহেলগাঁওয়ের ঘটনাটির পর বুধবার (২৩ এপ্রিল) সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড়সড় পাঁচটি পদক্ষেপ নেয় দিল্লি। এর মধ্যে আছে পাকিস্তানের কোনো নাগরিককে ‘সার্ক ভিসা’ না দেওয়া; পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ রাখা, পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশন থেকে কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে নেওয়া; পাকিস্তানের নাগরিকদের দেওয়া ভারতের ভিসা বাতিল এবং তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ।
এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি সাময়িক স্থগিত; ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা বাতিল (শিখ তীর্থযাত্রীরা এর বাইরে থাকবেন); ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা; ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভারত থেকে আগতদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ; ভারতে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পারসনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা; ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা ত্রিশে নামিয়ে আনা; ভারতীয় এয়ারলাইনের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ ও ভারতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের বাণিজ্য স্থগিত।
এমন উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে ভারতের অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করা এবং দেশটির নৌবাহিনীর মিসাইল বিধ্বংসের পরীক্ষার খবরেও মিলছে গণমাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খানের ঢাকা সফরের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ওই সময় ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ডি-৮ সম্মেলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালের জুলাইয়ে সেই হিনা রাব্বানির ডি-৮ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তিনি তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু হিনা রাব্বানি ঢাকায় আসেননি।
২০২১ সালে পাকিস্তানে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মন্ত্রী পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের। কিন্তু শেষ সময়ে তিনি সফরটি বাতিল করেন। তার বদলে বৈঠকে পাঠানো হয় তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনকে। এর বাইরে ২০২২ সালের মার্চে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে ইসলামাবাদে দুই দিনব্যাপী ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনিও সফরে না গিয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিবকে পাঠান।