■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বুধবার রাজধানীর হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রেস সচিব জানান, শিশুটির অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। তার সিজিএস (অবিরত গ্লুকোজ মনিটরিং সিস্টেম) লেভেল ৪ থেকে ৩ নেমে এসেছে। সিএমএইচের চিকিৎকরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিশুটির সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চান শফিকুল আলম।
বুধবার সকালে তার দুবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকর্ষিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন শিশুটির চিকিৎসায় যুক্ত এক চিকিৎসক।
শিশুটি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে আছে।
শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য বুধবার সকালে বলেন, তার (শিশুটি) অবস্থা আরও জটিল হয়েছে। সে এখন জটিল পরিস্থিতির সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আজ সকাল আটটার দিকে প্রথমবার তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসায় তার হৃৎস্পন্দন ফিরে আসে। পরে দ্বিতীয়বার তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। সেবারও চিকিৎসায় তা ফিরে আসে। তার মস্তিষ্ক প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থায় আছে। তার গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) ৩। মস্তিষ্কের আঘাতের কারণে কোনো ব্যক্তির চেতনার মাত্রা হলো জিসিএস। মানুষের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৫। জিসিএস ৩ অবস্থাকে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থা বলে বিবেচনা করা হয়।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ঘটনার সময় শিশুটিকে যখন ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়, তখন তার মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। পরদিন বেলা ১১টায় হাসপাতালে নেওয়ার আগপর্যন্ত এই অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল। এ কারণে দীর্ঘ সময় অক্সিজেন না পেয়ে মস্তিষ্কের বড় ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দিলে মস্তিষ্কের এত ক্ষতি হতো না বলে মন্তব্য করেন চিকিৎসক।
গত ১০ মার্চ রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকাকালে গত ৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় শিশুটিকে সিএমএইচের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ভর্তি করা হয়।
ওই সময় শিশুটি সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় ছিল। তখন তার রক্তচাপ ১২০/৭০ মি.মি. (কার্ডিয়াক সাপোর্টসহ), হৃদ স্পন্দন ১১৮/মিনিট, অক্সিজেনের মাত্রা ৯৬ শতাংশ পাওয়া যায়। শিশুটির গলার সামনের দিকে গভীর ক্ষত এবং শরীরের অন্যান্য স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন রোববার শিশুটিকে সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শিশুটি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শিশুটির জন্য সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
৩ আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার কারাগারের থাকা চার আসামির মধ্যে তিনজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার তিন পুরুষ আসামিকে ঢাকায় সিআইডির ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে নিয়ে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে জানান মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম।
সেইসঙ্গে ভুক্তভোগী শিশুর ডিএনএ নমুনাও জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী শিশুটি যখন মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানে তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
আসামিদের মধ্যে একজন নারী। বাকি পুরুষ আসামিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা সিআইডি ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়।
সেখানে তাদের নমুনা সংগ্রহের পর আবার তাদের মাগুরা জেলা কারাগারে নেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম।
গত ৫ মার্চ বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। পরে শিশুর মা বাদী হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার ৪ আসামি আগে থেকেই পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। মূল অভিযুক্ত ভুক্তভোগী শিশুর বোনের শ্বশুরকে ৭ দিন ও বাকি ৩ আসামি- বোনের স্বামী, শাশুড়ি ও ভাসুর প্রত্যেককে ৫ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।