মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়েছেন পরীমণি

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। এ সময় আদালতকে বিতর্কিত না করার জন্য পরীমণিকে বলেন বিচারক।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদের আদালত শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন।

এদিন সকাল ১০টার দিকে পরীমণি আদালতে আসেন। ১০টা ১৭ মিনিটের দিকে আদালতের বিচারকাজ শুরু হয়। এ সময় এজলাসের পেছনে একটি বেঞ্চে বসে ছিলেন পরীমণি। তাকে আসামিদের ডকে যেতে বলা হয়।

পরীমণির পক্ষে আইনজীবি নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, গতকাল মামলাটি চার্জশুনানির জন্য ছিল। পরীমণি অসুস্থ থাকায় আদালতে আসতে পারেননি। চার্জগঠন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আজ আত্মসমর্পণ করেছেন। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।

এরপর বিচারক বলেন, আশা করছি, সবাই কোর্টের ডিগনিটি রক্ষা করবেন। কোর্টকে বিতর্কিত করবেন না। মামলাটা জামিনযোগ্য ধারার। আসলেই জামিন পাবেন বিষয়টা এমন নয়। বিচারাধীন বিষয়ে এভাবে আগে কথা বলাটা কতটুকু যৌক্তিক?

পরীমণির আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কোর্ট অফিসার। এ বিষয়গুলো ভবিষ্যতে খেয়াল রাখবেন।পরে আদালত এক হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিনের আদেশ দেন।

এর আগে গতকাল রোববার পরীমণি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন বিচারক।

জামিন পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন অভিনেত্রী। ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘শুরু থেকেই আইনের ওপর শ্রদ্ধশীল ছিলাম, এখনও আছি। আইনের ওপর বিশ্বাস ছিল। আর একদম শুরু থেকেই আপনারা সবাই যেভাবে আমাকে সাপোর্ট করেছেন, যতটা পেরেশানিতে ছিলেন—তা দেখে আমার নিজের যত দুঃখ ছিল, সেটা ঘুচে গেছে। সবাইকে ধন্যবাদ।’

তিনি বলেন, গতকাল থেকে আপনারা যেভাবে আপনাদের ভালোবাসা আমাকে জানান দিয়েছেন সেজন্য আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আপনাদের ভালোবাসায় আজ জামিন নিয়ে বাসায় ফিরছি।

পরী আরও বলেন, আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। এ বিশ্বাসটা আমি শেষ অবধি রাখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমি ন্যায় বিচার পাবো, আপনারা আমার সাথে থাকবেন। এ ভালোবাসা নিয়েই আমি জিততে চাই।

আদালতে জামিনের আদেশ শুনে খুশিতে কান্না করেন পরী। সাংবাদিকরা সে বিষয়ে পরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এখনও কান্নার সময়টা আসেনি। বিজয়ের কান্নাটা আরও পরে হবে।

পাল্টা মামলা হওয়া প্রসঙ্গে পরী বলেন, এটা তো পরিষ্কার। আমি একটি মামলা করলাম তার আড়াই বছর পর পালটা মামলা করা হলো শুধুমাত্র আমাকে দমানোর জন্য। মামলাটা বিচারাধীন। আমি আশা করি, আমি ন্যয়বিচার পাব। এখান থেকে আমি আশাহত হতে চাই না। সত্যের জয় হবে।

এদিকে পরীমনির বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আদালতে প্রমাণ হলে কী সাজা হবে অভিনেত্রীর, সে নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম মো. সোহেল।

আইনজীবী সোহেল বলেন, পরীমনির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় চার্জশিট গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আদালতে প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ৩ বছর সাজাপ্রাপ্ত হবেন পরীমনি।

তিনি বলেন, ৩২৩ ধারার স্বেচ্ছায় আঘাত করার অপরাধটি প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ১ বছর আর অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন প্রমাণ করতে পারলে সর্বোচ্চ ২ বছরের সাজা হতে পারে পরীমনির। তবে আদালত চাইলে শাস্তি কমাতে পারেন। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিই চাইব।

গত বছরের ১৮ এপ্রিল মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে পরীমনি ও জুনায়েদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গতকাল দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালত সমন জারি করেন।

২০২২ সালের ৬ জুলাই পরী মণির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে আদালতে এ মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরী মণি ও তাঁর কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, পরীমণি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহল সেবনে অভ্যস্ত। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন নামিদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পারসেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমণি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়ে হয়রানির ভয় দেখান। ২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢোকেন এবং দ্বিতীয় তলার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তারা ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন।

এতে আরও বলা হয়, বাদী (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত ১টা ১৫ মিনিটে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন, তখন পরীমণি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাসিরকে ডাক দেন। তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসারও অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে পরীমণি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নাসিরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পারসেল দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নাসির উদ্দিন এতে রাজি না হওয়ায় পরীমণি তাকে গালমন্দ করেন। নাসির এবং আসামিদের মধ্যে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে পরীমণি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনও ছুড়ে মারেন। এতে নাসির মাথায় এবং বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন।

বাদী মামলায় আরও উল্লেখ করেন, পরীমণি ও তার সহযোগীরা তাকে (নাসির উদ্দিনকে) মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও বোট ক্লাবে ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি সাভার থানায় বাদী নাসির উদ্দিনসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে মামলা করেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *