এইচএসসির বাকি পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত পরে হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) এসব তথ্য জানিয়েছেন।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এখন বাকি বিষয়গুলোর ফল কীভাবে তৈরি ও প্রকাশ করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সব বোর্ড এটা নিয়ে আলোচনা করবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবে। তারপর কীভাবে ফল তৈরি ও প্রকাশ করা হবে, তা চূড়ান্ত হবে।

এর আগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিলের এক দফা দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকরী শিক্ষার্থীরা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।

মঙ্গলবার বিকাল চারটার দিকে তারা সচিবালয়ের ভেতরে ৬ নম্বর ভবনের ১৮ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণায়ের ঢুকে পড়েন। এর আগে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। 

পরীক্ষা বাতিলের এক দফা দাবিতে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ‘আমাদের দাবি একটাই-পরীক্ষা বাতিল চাই’, ‘দাবি মোদের একটাই-পরীক্ষা বাতিল চাই’, ‘আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম-সংগ্রাম’, ‘পরীক্ষা না বিকল্প, বিকল্প-বিকল্প’, ‘যুক্তি দিয়ে আন্দোলন-বন্ধ করা যাবে না’, ‘চলছে লড়াই-চলবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

সকাল থেকে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন পরীক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে দুপুরের দিকে তারা সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন।

পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান এবং আলোচনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। সে সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশ্বাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

এর আগে দুপুরে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা অর্ধেক নম্বরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একই সঙ্গে পরীক্ষা আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ পরীক্ষার্থীরা। তারা পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে আন্দোলন করেন।

এর আগে এসব বিষয়ের পরীক্ষার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ-এর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে অনুষ্ঠিত হবে। আর পুনরায় পরীক্ষা শুরুর তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও দুই সপ্তাহ পেছানো হবে।

সভা শেষে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার  বলেন, আগে যদি একটি বিষয়ে ৮টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো সেখানে এখন একই সময়ে চারটি প্রশ্নের উত্তর দিলেই হবে।  তবে পরীক্ষার সময় পূর্ণ সময়েই থাকবে। এ ছাড়াও পরীক্ষার সময় আরও ২ সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।  ফলে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় গত ৩০ জুন থেকে। এর মধ্যেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাতটি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বোর্ডের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এরপরই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রথমে গত ১৮ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তারপর একসঙ্গে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু পরে জানানো হয়, ১১ আগস্ট পরীক্ষা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বিভিন্ন এলাকায় থানায় হওয়া হামলায় প্রশ্নপত্র রাখা ট্রাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছিল। সর্বশেষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল শিক্ষা বোর্ড।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *