:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
চামড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানী খাত। কোরবানির সময়ে কাটা চামড়া সঠিক ব্যবস্থাপনা তথা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে এ জাতীয় সম্পদ রক্ষা আপনার আমার নাগরিক দায়িত্ব।
সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানোর পদ্ধতি:
(১) পশু জবাই করার অন্তত ২ ঘন্টা পূর্ব হতে পশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এতে চামড়া ছাড়ানো সহজ হবে;
(২) চামড়া ছাড়ানোর শুরুতেই পশুর সামনের এক পা থেকে বুকের উপর দিয়ে সামনের অন্য পা পর্যন্ত এবং পেছনের এক পা থেকে লেজের গোড়া হতে প্রায় ৪-৬ ইঞ্চি উপর দিয়ে পেছনের অন্য পা পর্যন্ত আড়াআড়ি ভাবে কাটতে হবে;
(৩) অতঃপর আড়াআড়ি ভাবে বুকের ওপর দিয়ে গলা থেকে মলদ্বার পর্যন্ত কাটতে হবে;
(৪) চামড়া আড়াআড়ি ভাবে কাটার পর চামড়া ছাড়ানো শুরু করতে হবে।
(৫) চামড়া আড়াআড়ি ভাবে কাটার জন্য সুচালো মাথার ছুরি এবং চামড়া ছাড়ানোর জন্য বাঁকানো মাথার ছুরি ব্যবহার করতে হবে;
(৬) ফ্লে-কাট ত্রুটি এড়ানোর জন্য দক্ষ ব্যক্তি কর্তৃক সতর্কতার সাথে ও সঠিক ছুরি ব্যবহার করে চামড়া ছাড়াতে হবে।
(৭) পশু জবাইয়ের পর রক্তমাখা ছুরি কোনভাবেই পশুর চামড়ায় মোছা এবং ছাড়ানো চামড়া মাটিতে ছেঁচড়ানো যাবে না, এতে চামড়ার ক্ষতি হতে পারে;
(৮) ছাগল বা ভেড়ার ক্ষেত্রে গাছের শক্ত ডাল বা এরূপ কিছুর সাথে ঝুলিয়ে হাতের সাহায্যে টেনে টেনে চামড়া ছাড়াতে হবে।
কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের পদ্ধতি:
(১) চামড়া ছাড়ানোর পর চামড়ায় লেগে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ও মাংস বাঁকানো ছুরির সাহায্যে সতর্কতার সাথে পরিষ্কার করে রক্তসহ অন্যান্য ময়লা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে;
(২) চামড়ায় লবণ প্রয়োগের পূর্বে পরিষ্কার করা চামড়া থেকে পানি ঝরিয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে;
(৩) অতঃপর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য চামড়ার ফ্লেশ/মাংস অর্থাৎ ভেতরের অংশে সর্বত্র ২-৩ মিমি পুরুত্বের মুঠো মুঠো লবণ সমভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে;
(৪) চামড়া ছাড়ানোর পর ফেলে না রেখে ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই লবণ প্রয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমবার চামড়া লবণ শুষে নিলে প্রয়োজনে পুনরায় আরেক ন্তর লবণ দিতে হবে;
(৫) সাধারণত গরু/মহিষের প্রতিটি চামড়ার ক্ষেত্রে ৮-১০ কেজি এবং ছাগল/ভেড়ার প্রতিটি চামড়ার ক্ষেত্রে ৩-৪ কেজি লবণ প্রয়োগ করতে হবে;
(৬) অতঃপর এক জোড়া চামড়ার লবণ দেয়া অংশ মুখোমুখি (ফ্রেশ টু ফ্রেশ) অর্থাৎ লোমযুক্ত অংশ বাহিরের দিকে রেখে ঢিবির ন্যায় মাঝখানে কিছুটা উঁচু করে সর্বোচ্চ ১ মিটার উচ্চতায় স্তুপাকারে সংরক্ষণ করতে হবে;
(৭) স্থানীয়ভাবে লবণ লাগানো চামড়া সংরক্ষণের জন্য শুষ্ক ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে এমন ঘর নির্বাচন করতে হবে। সংরক্ষণাগারে বৃষ্টির পানি প্রতিরোধী ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে খোলা জায়গায় চামড়া সংরক্ষণ করা যাবে না।
চামড়ার মান নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণে প্রশাসনের ভূমিকা:
(১) স্থানীয় সকল পশুর হাটে ইজারাদার কর্তৃক দৃশ্যমান জায়গায় লবণ বিক্রয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে যা হাসিল আদায়ের সময় ক্রেতা সংগ্রহ করবেন;
(২) কোরবানির দিন হতে পরবর্তী ০৭ দিন পর্যন্ত অন্য জেলা হতে ঢাকা মহানগরের অভ্যন্তরে কাঁচা চামড়ার প্রবেশ রোধ করতে হবে;
(৩) স্থানীয় প্রশাসনের আওতাধীন কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের সম্ভাব্য স্থানসমূহে অস্থায়ী চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
(৪) স্থানীয় অস্থায়ী চামড়া সংরক্ষণাগার হতে কোরবানি পরবর্তী ০৩ (তিন) মাস চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে;
(৫) জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ কাঁচা চামড়া ব্যবস্থাপনায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন;
(৬) কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়নে মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
(৭) জেলা প্রশাসক কোরবানির সময়ে কাঁচা চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সার্বিক সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবেন।
কোরবানির চামড়ার মান নিয়ন্ত্রণে কোরবানি দাতার প্রতি অনুরোধ:
(১) কোরবানি পশু ক্রয়ের সময়ই গরু/মহিষ প্রতি ৮-১০ কেজি এবং ছাগল/ভেড়া প্রতি ৩-৪ কেজি খোলা লবণ ক্রয় করুন;
(২) কাঁচা চামড়ায় যেকোনো ত্রুটি এড়াতে দক্ষ লোকের সাহায্যে সতর্কতার সাথে ও সঠিক ছুরি ব্যবহার করে চামড়া ছাড়ান;
(৩) কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় সঠিক নিয়ম ও পরিমাণে লবণ প্রয়োগ করুন;
(৪) প্রয়োজনে পশু কোরবানির আগেই পর্যাপ্ত লবণ নিকটস্থ ডিলার/পাইকারি লবণ বিক্রেতার নিকট হতে সংগ্রহ করে রাখুন।
আপনার সহযোগিতায় মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী উপকারী মান সম্পদ চামড়া হিসাবে সময় করবে এবং একটি চামড়া নয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ফলে আপনার সহযোগিতায় চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সুগম হবে।
জনস্বার্থে: বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), শিল্প মন্ত্রণালয়