নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে চান সাহাবুদ্দিন

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে চান মো. সাহাবুদ্দিন। তাঁর এ পরিকল্পনা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

রয়টার্স বলছে, রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে তিনি ‘অপমানিত বোধ’ করছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। এর বাইরে পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। দেশের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে চলে যাওয়ার পর সাহাবুদ্দিনের অবস্থান গুরুত্ব পায়। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর সাহাবুদ্দিনই ছিলেন দেশের শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।

হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমি বিদায় নিতে আগ্রহী। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে বলেই আমি এ অবস্থানে আছি।’

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সঙ্গে প্রায় সাত মাস কোনো ধরনের সাক্ষাৎ করেননি। রাষ্ট্রপতির গণমাধ্যম বিভাগ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে নিজের ছবি সরিয়ে ফেলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাই কমিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল। এগুলো হঠাৎ করে এক রাতের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। মানুষজন ভাবতে পারে, রাষ্ট্রপতিকে হয়ত সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি।’

সাহাবুদ্দিনের ভাষ্য, ছবি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রয়টার্স দাবি করেছে, রাষ্ট্রপতির মন্তব্যগুলো নিয়ে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস উইংয়ের কাছে মন্তব্য চেয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া মেলেনি।

রাষ্ট্রপতি জানান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। জেনারেল ওয়াকার তাঁকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ক্ষমতা দখলের কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই।

রয়টার্স লিখেছে, ২০২৪ সালের আগস্টে প্রাণঘাতী বিক্ষোভের সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার হস্তক্ষেপ না করায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন নির্ধারিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের সামরিক শাসনের অতীত থাকলেও জেনারেল ওয়াকার ‘গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন চান’।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, শুরুতে কিছু শিক্ষার্থী তাঁর পদত্যাগের দাবি জানালেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক দল তাঁর পদত্যাগ চাননি।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর আগামী সরকার গঠনের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারে বলে জনমত জরিপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে এই দুই দল ২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারে ছিল।

শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন কি না জানতে চাইলে সাহাবুদ্দিন উত্তর দিতে চাননি। তিনি রয়টার্সকে বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই তিনি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।

৭৫ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। চুপ্পু নামেই বেশি পরিচিত সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *