হার্টের ১০ ধরনের রিংয়ের দাম কমলো

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

হৃদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা উপকরণ করোনারি স্টেন্টের দামে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যহ্রাস করে নতুন সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সোমবার (৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ওষুধ প্রশাসন-১ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটির সুপারিশ, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের যুক্তিসঙ্গত মুনাফা এবং ভ্যাট-শুল্ক ইত্যাদি বিবেচনায় তিনটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি-অ্যাবট, বোস্টন সায়েন্টিফিক এবং মেডট্রনিক-এর আমদানি করা স্টেন্টগুলোর দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

মেডট্রনিক কোম্পানির ‘রিজলিউট অনিক্স’ স্টেন্টের আগের দাম ছিল ১,৪০,৫০০ টাকা, যা কমিয়ে ৯০,০০০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।

বোস্টন সায়েন্টিফিক কোম্পানির ‘প্রোমাস এলিট’ স্টেন্ট আগে ৭৯,০০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৭২,০০০ টাকা করা হয়েছে। একই কোম্পানির ‘প্রোমাস প্রিমিয়ার ’ স্টেন্টের দাম ৭৩,০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৭০,০০০ টাকা করা হয়েছে।

সিনার্জি সিরিজের তিনটি স্টেন্টের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে ‘সিনার্জি এক্সডি’ স্টেন্টে, যার আগের দাম ছিল ১,৮৮,০০০ টাকা। নতুন দামে এটি এখন বিক্রি হবে ১,০০,০০০ টাকায়। অন্যদিকে ‘সিনার্জি’ ও ‘সিনার্জি শিল্ড’ স্টেন্ট দুটির দাম কমিয়ে যথাক্রমে ৯০,০০০ টাকা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১,১৭,০০০ ও ১,২০,০০০ টাকা।

অ্যাবট কোম্পানির ‘জায়েন্স প্রাইম’ স্টেন্টের দাম ছিল ৬৬,৬০০ টাকা, যা কমিয়ে ৫০,০০০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘জায়েন্স এক্সপেডিশন’ স্টেন্টের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি, এটি আগের মতোই ৭১,৫০০ টাকায় বিক্রি হবে।

তবে ‘জায়েন্স আলপাইন’ এবং ‘জায়েন্স সিয়েরা’ স্টেন্ট দুটির দাম ছিল যথাক্রমে ১,৪০,৫০০ এবং ১,৪০,০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৯০,০০০ টাকায় আনা হয়েছে।

এছাড়া মেডট্রনিক কোম্পানির আরেকটি স্টেন্ট ‘অনিক্স ট্রুকর’ আগে বিক্রি হতো ৭২,৫০০ টাকায়। এখন সেটি পাওয়া যাবে ৫০,০০০ টাকায়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অনুমোদিত দাম সংক্রান্ত তালিকা হাসপাতালে দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখা এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্টেন্টের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ৫ শতাংশের বেশি আদায় না করতে এবং নির্ধারিত দামের বাইরে কোনো কার্ডিওভাসকুলার বা নিউরো ইমপ্ল্যান্ট ডিভাইস কিনতে না দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিশ্লেষকদের মতে, এই মূল্যহ্রাস সাধারণ মানুষের হৃদরোগ চিকিৎসায় বড় স্বস্তি নিয়ে আসবে। স্টেন্টের দাম হ্রাস পাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে রোগীরা উন্নত সেবা নিতে পারবেন।

এর আগে গত বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি ২৩ ধরনের স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

স্টেন্ট বা রিং পরানোই বাংলাদেশে হার্টের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। কারো হৃদপিন্ডে রক্ত সঞ্চালনে ব্লক বা বাধার সৃষ্টি হলে ডাক্তার তাকে এক বা একাধিক রিং পরানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

হার্টে রিং পরানোর পদ্ধতিকে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে, একটি সরু ক্যাথেটার ব্যবহার করে ধমনীতে একটি ছোট, জাল আকৃতির নল (স্টেন্ট) স্থাপন করা হয়। এটি রক্তনালীকে খোলা রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডে রক্ত​সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

আর রিং বাংলাদেশে আসে দেশের বাইরে থেকে। সাধারণত ইউরোপ-আমেরিকা থেকে এগুলো আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জার্মানি, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও আয়ারল্যান্ড থেকে রিং আসে বাংলাদেশে। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত থেকেও রিং আমদানি করা হয়।

আমদানি করা এসব রিংয়ের মূল্য তালিকা বিভিন্ন হাসপাতালে টানানো থাকে। রোগীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ তালিকা থেকে বেছে নেওয়া রিং রোগীর হার্টে প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকরা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *