■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
তিন দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি আগের মতোই চলবে।
রোববার (৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় সচিবালয়ে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ।
তিনি জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আজ সকালে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।
শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, শিক্ষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বৈঠকে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরা হয়— সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির ব্যবস্থা করা। দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক নেতাদের আশ্বাস দেয় যে, অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিষয়গুলো অবহিত করে দ্রুততম সময়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চলমান কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিচ্ছি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। কর্মবিরতি শুরুর পর থেকে এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে এবং ১৩তম গ্রেডের শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলনে নামেন।
গত শনিবার সকাল থেকে এ তিন দাবিতে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকলে শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে শিক্ষকদের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। পরে রোববার দুপুর ১টার দিকে আটক পাঁচ শিক্ষককে ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ।
পুলিশের হেফাজত থেকে মুক্ত শিক্ষকরা হলেন জয়পুরহাটের মু. মাহবুবুর রহমান, পটুয়াখালীর নজরুল ইসলাম লিটন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের আব্দুল কাদের, ধামরাইয়ের শরিফুল ইসলাম ও কুমিল্লার সোহেল রানা।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সায়েদুর রহমান আকন্দের জিম্মায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। জিম্মানামায় উল্লেখ করা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাঁচ শিক্ষককে জিম্মায় মুক্তি দেওয়া হলো।
মাদারীপুরের শিবচরের ১১৪ নম্বর ওমর ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার ক্লাস বর্জন চলবে।
বরিশালের হিজলার পশ্চিম চর বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলেছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ। এ ছাড়া ঝালকাঠির নলছিটির ৭২ নম্বর দক্ষিণ তিমিরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার বৈদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২১ নম্বর চারিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্কুলটি সহকারী শিক্ষক ও ঐক্য পরিষদের নেতা শাহিনুর আল আমিন। তিনি বলেন, শিক্ষকের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আহতদের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছি, কথা বলেছি। তবে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি না।
