■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
সপ্তাহখানেকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
এই পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপির হার ৯৬ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত। এসব ব্যাংক একীভূত করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন গভর্নর।
দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং এ জন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
ওই পাঁচটির বাইরে আরও অন্তত ২০টি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ব্যাংকও। পাশাপাশি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের বিষয়েও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা জানান গভর্নর। তাঁর ভাষায়, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এই ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রির চেষ্টা চলছে। বিক্রি সফল হলে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পূরণ করা হবে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঘাটতি।
এ মুহূর্তে দুর্বল কোনো ব্যাংক বন্ধ করার পরিকল্পনা নেই সরকারের। বরং টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ‘এখানে আমানতকারীদের কোনো ঝুঁকি নেই। সরকার প্রাথমিকভাবে মূলধন দেবে এবং একটি পর্যায়ে তা লাভসহ ফেরত নেবে। তখন সম্ভব হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে নতুন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হতে পারে।’
একীভূত ব্যাংকে শেয়ার পাওয়া যাবে বাজারমূল্য ও অভিহিত মূল্যের ভিত্তিতে গড় হিসাব করে। শেয়ার সংখ্যা কমে যেতে পারে, কিন্তু তার মূল্যমান বজায় থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লভ্যাংশ না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, ব্যাংক শক্তিশালী হলে ভবিষ্যতে সুবিধা মিলতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের।
ব্যাংক একীভূত হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কীভাবে শেয়ার পাবেন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীরা নতুন ব্যাংকে শেয়ার পাবেন। এই শেয়ারের পরিমাণ নির্ধারিত হবে বাজারমূল্য ও অভিহিত মূল্যের গড় হিসাব করে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে লভ্যাংশ দেওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও সরকার নতুন ব্যাংকের জন্য মূলধন দেবে। ভবিষ্যতে যখন ব্যাংক লাভজনক অবস্থায় পৌঁছাবে, তখন সরকার তার বিনিয়োগ করা অর্থ লাভসহ ফেরত পাবে। পরবর্তীসময় ব্যাংকটি কোনো ভালো দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারীর হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে।
একীভূতকরণ এখন কোন পর্যায়ে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে টেকনিক্যাল ইস্যু যেমন রয়েছে, তেমনি নীতিনির্ধারণী ও আইনগত বিষয়ও জড়িত। আইনগত দিক থেকে কোনো জটিলতা নেই, এখন বিদ্যমান আইনের আওতায় ব্যাংকগুলো একীভূত (মার্জার) করা সম্ভব।
তিনি জানান, একীভূতকরণে কোন কোন ব্যাংককে যুক্ত করা হবে, সেটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এ সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা ও সূচকের ওপর। যেসব ব্যাংক এককভাবে টিকে থাকার মতো অবস্থায় নেই, তাদের একীভূত করা হবে।
পাঁচ ইসলামী ধারার ব্যাংক একীভূত নিয়ে আরিফ হোসেন খান বলেন, প্রাথমিকভাবে ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংক, যারা একই নীতিমালায় পরিচালিত হচ্ছে, তাদের একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো একটি স্থিতিশীল, শক্তিশালী ও কার্যকর ইসলামি ব্যাংক গঠন করা, যা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত টেকসইভাবে অর্থায়ন করতে পারবে।
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মালিকানা আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের। বাকি চার ব্যাংকের মালিকানা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের ছিল। বিগত সরকারের মেয়াদে এসব ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নামে-বেনামে অর্থ তুলে নেন মালিকরা। এতে দুর্বল হয়ে পড়ে ব্যাংকগুলো।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই পাঁচ ব্যাংকের নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েছে। এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব দেয় অন্তর্বর্তী সরকার।