■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্ষোভ থেকে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে’ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সেখান থেকে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠকরা।
এর আগে একই দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করে ইনকিলাব মঞ্চ। তাদের মিছিল থেকেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।
একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ ঘুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মিছিল থেকে ‘গড়িমসি বন্ধ কর, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘২৪–এর বাংলায়, খুনি লীগের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
সমাবেশে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’র পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এ বি যুবায়ের। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অপচেষ্টা রুখে দিতে ছাত্র-জনতা আবারও প্রস্তুত। রক্তের দাগ শুকায় নাই। এই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়ের খুনিদের ফেরানোর কোনো চেষ্টা আমরা সফল হতে দেব না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক হবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আমরা একত্র হয়েছি। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ আমরা তৈরি করেছি। আপনি যে দল, যে মত বা যে পথেরই হোন না কেন, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে একমত হন, তাহলেই আপনি এখানে আমন্ত্রিত। আসুন, আবার এক হই, জুলাইয়ে যেমন হয়েছিলাম। গণহত্যাকারীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর দেশের শাসনক্ষমতার কাঠামো বদলে, রাষ্ট্র কাঠামোও বদলে যাবে। সেনানিবাস, ভারত ও কিছু রাজনৈতিক দলের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যতক্ষণ আমাদের শিরায় এক ফোঁটা রক্ত থাকবে, ততক্ষণ আমরা আওয়ামী লীগকে ফিরে আসতে দেব না।’
অপরদিকে ইনকিলাব মঞ্চও কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল শুরু করে। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন, কলা ভবন, সূর্যসেন হল, ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী বলেন, ‘বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্যকালে শরীফ ওসমান হাদি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে যদি নির্বাচন করে তবে বাংলাদেশে রক্তের যমুনা বয়ে যাবে। দুই হাজারেরও বেশি শহীদ, ৫০ হাজারেরও বেশি অঙ্গহারা আহত ও তাদের মা-বাবার কসম, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ শহীদদের রক্তের কসম- শরীরে রক্ত বিন্দু থাকতে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দিব না।
আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন, সোহেল তাজদের মতো মানুষকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সামনের নির্বাচনে কিছু আসন নিয়ে কোনো না কোনোভাবে বিরোধী দলে থাকবে, সেখানে থেকে যত বদমাইশি রাজনীতি আছে সব করবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, নির্বাচন হলে আড়াই থেকে তিন বছর বিএনপি ক্ষমতায় থাকবে, বিরোধী দলে থেকে আওয়ামী লীগ ভারত ও ইসরায়েলকে সাথে নিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করবে তিন বছরের মাথায় বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে। এরপর যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে কচুকাটা করবে।
সুতরাং, শরীরে রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেব না৷
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মুদ্দাসিসর চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের পরে যে মাইনাস টু ফর্মুলা সে মাইনাস টু ফর্মুলা হচ্ছে সাউথ এশিয়ান মাইনাস টু। এখানে আমাদের ভারত এবং পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে বের হতে হবে। আমাদের নতুন বাংলাদেশের জন্য নতুন ডিপ্লোম্যাটিক জোন নির্ধারণ করতে হবে।নতুন ডিপ্লোম্যাটিক জোনের মাধ্যমে আমার দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। আমরা ভারত পাকিস্তানমুখী রাজনীতির শেষ করে ফেলেছি। আমরা আর ভারত পাকিস্তানমুখী রাজনীতি করতে চাই না। ভারতের প্রেসক্রিপশনে নতুন করে বাংলাদেশের রাজনীতি কি হবে, বাংলাদেশের ভাগ্য কি হবে সেটি আমরা কখনোই মেনে নেব না।
মঞ্চের পক্ষ থেকে শনিবার (২২ মার্চ) বিকেল পাঁচটায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও গণইফতারের আয়োজন করা হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।