■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
অমর একুশে বইমেলায় নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই ‘চুম্বন’ রাখায় সব্যসাচী স্টল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় ছাত্র ও প্রকাশকের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। পরে প্রকাশক শতাব্দি ভবকে পুলিশে দেয় তৌহিদী জনতা। পরে স্টলটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, স্টলটির নাম সব্যসাচী। এটি বই মেলার ১২৮ নম্বর স্টল। সর্বশেষ তথ্যমতে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্টলটি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিক্ষুদ্ধ জনতার পাশাপাশি পুলিশকেও সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানিয়েছেন, স্টলে শতাব্দী ভব নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। তাকে থানায় নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ওই ব্যক্তি যে অপরাধ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হবে।
তৌহিদী জনতার মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘তাসলিমা নাসরিনের বই এই স্টলে রাখা ছিল। ছাত্ররা আসে সবাই মিলে। প্রকাশককে জিজ্ঞাসাবাদ করে, কেন বই রাখা হয়েছে। এতে প্রকাশক রাগান্বিত হয়ে যান। ছাত্ররা জানতে চান, নিষিদ্ধ বই কেন বিক্রি হচ্ছে। তখন ছাত্র ও প্রকাশকের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পাশ থেকে কয়েকজন পুলিশ ছিল। তারা সামাল দিতে আসে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখলে প্রকাশক জয় বাংলা স্লোগান দেন। এতে আরও মানুষ জড়ো হয়ে যায় এবং ছাত্ররা প্রকাশককে পুলিশে সোপর্দ করে।’
বইমেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি করা হচ্ছিল। ছাত্রদের সঙ্গে এটা নিয়ে ঝামেলা হয়। প্রকাশকের সঙ্গে ছাত্রদের হাতাহাতি হয়। এখন প্রকাশক পুলিশি হেফাজতে আছে। তাঁকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হচ্ছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমির বইমেলা পরিচালনা কমিটির বৈঠক চলছিল।
এ ঘটনায় তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা বইমেলার সব্যসাচী স্টল গুঁড়ো করে দিতে চেয়েছে। সুতরাং বইমেলা কর্তৃপক্ষের কী করা উচিত? সব্যসাচী স্টলের সবার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। যে সন্ত্রাসীরা স্টল গুঁড়ো করে দেবার, ধ্বংস করে দেবার, প্রকাশককে আর লেখককে খুন করার হুমকি দিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া উচিত। তা না করে তারা প্রকাশককে বলেছে বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বই সরিয়ে নিতে। সন্ত্রাসীরা থেকে যাবে, বই সরে যাবে। এই হলো প্রো-সন্ত্রাসী ক্ষমতাবানদের বিচার।’
প্রকাশক শতাব্দি ভব এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘তাসলিমা নাসরিনের বই রাখায় সব্যসাচী স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য একাধিক ইসলামিস্ট গ্রুপ ও পাবলিক ফেসবুকে পোস্ট করে। বইমেলার নিরাপত্তা বিভাগ বই সরিয়ে নিতে হবে জানিয়েছে। তাই বইগুলো মেলা থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছি। এখন বইমেলায় তসলিমা নাসরিনের কোনো বই পাওয়া যাচ্ছে না।’
স্টলটির সামনে বাগ্বিতণ্ডা চলাকালে ফেসবুক লাইভ করেন মুহাম্মদ আরিফ নামের একজন। তাতে দেখা যায়, স্টলের আলো বন্ধ করে দিয়ে কয়েকজন স্টলের ভেতর প্রবেশ করেন এবং ভাঙচুরের ঘোষণা দেন। এ সময় স্টলের ব্যানার খুলে ফেলার দাবি জানানো হয়। ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে এবং স্টলের সামনে ত্রিপল টাঙিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয়।
এর আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সব্যসাচীর প্রকাশক ও অভিনেত্রী সানজানা মেহেরান বলেন, প্রতি বছর তিনি তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ করেন এবং বইমেলায় বিক্রি করেন। তবে বাংলাদেশে তসলিমার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি কিছু হুমকিও পান। তবে অতীতে সেগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। এ বছরও তিনি তসলিমার ‘চুম্বন’ বইটি প্রকাশ করেছেন এবং এর পর থেকে একের পর এক হুমকীবার্তা আসছে তার কাছে।