:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
মস্কোয় ভয়াবহ হামলার পেছনে প্রথমবারের মতো উগ্র ইসলামপন্থীদের দায়ী করলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ হামলায় ইউক্রেনের সংশ্লিষ্ট থাকারও ইঙ্গিত দেন তিনি।
ক্রোকাস সিটি হলে কনসার্টে অংশগ্রহণকারীদের ওপর ছদ্মবেশী বন্দুকধারীদের ওই হামলায় জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ। হামলায় অন্তত ১৩৭ জন নিহত হন।
সোমবার এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আমরা জানি, ওই অপরাধ উগ্র ইসলামপন্থীদের হাতে সংঘটিত হয়েছে, যাদের আদর্শের বিরুদ্ধে ইসলামি বিশ্ব নিজেই শতাব্দীর পর শতাব্দী লড়াই করে আসছে।’
পুতিন অভিযোগ করেন, ‘নব্য-নাৎসি কিয়েভ শাসকদের হাত ধরে ২০১৪ সাল থেকে যারা আমাদের দেশের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছে, তাদের পুরো চেষ্টার একটি অংশ হয়ে থাকতে পারে এ নৃশংসতা।’ উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া তার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়।
সন্ত্রাসীরা কনসার্টে হামলা চালিয়ে কেন ইউক্রেনে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, সে প্রশ্ন রেখে পুতিন বলেন, ‘নিশ্চয়ই এ প্রশ্নের উত্তর বের করাটা জরুরি।’
পুতিন তাঁর বক্তব্যে হামলার সঙ্গে আইএসআইএলের (আইএসআইএস) সহযোগী আইএস-কে’র সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি; যদিও হামলার দায় একাধিকবার স্বীকার করে এরই মধ্যে ভিডিও প্রকাশ করেছে সন্ত্রাসী সংগঠনটি।
আইএস-কে’র দায় স্বীকারের পর তাদের স্বীকারোক্তিকে সঠিক বলে সমর্থন করেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। দেশটির মিত্র ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, তাঁর দেশের গোয়েন্দাদের তথ্যও আইএসআইএলের সহযোগী সংগঠনটির দিকে হামলায় জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পুতিনের সর্বশেষ ওই বক্তব্য দেওয়ার আগে গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নির্দিষ্ট করে কাউকে অভিযুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানান। হামলার ঘটনায় তদন্তের ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের অপেক্ষা করার অনুরোধ জানান তিনি।
হামলার বিষয়ে ৭ মার্চ রুশ কর্তৃপক্ষকে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করেছিল বলে প্রকাশিত খবর নিয়েও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র। তিনি বলেছিলেন, এ ধরনের কোনো গোয়েন্দা তথ্য গোপনীয় বিষয়।
ওই ঘটনায় প্রেসিডেন্ট পুতিন মুখ খোলার পর হামলাকারীদের কঠিন সাজা দেওয়ার বিষয়ে রাশিয়ায় জোর দাবি উঠেছে।
হামলার ঘটনায় গ্রেফতার চার সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে গত রোববার রাতে মস্কোর একটি আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়। চারজনকেই উপস্থিত করা হয় আদালতে। দৃশ্যত, প্রচণ্ড মারধরে সে সময় আহত দেখাচ্ছিল তাঁদের।
নাগরিক অধিকার নিয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠন বলেছে, এ চারজনের শারীরিক অবস্থা পুতিনের শাসনামলে রাশিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতির দুর্বল রেকর্ডই তুলে ধরেছে।
রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে অপরাধীদের সাজা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বলেন, ‘তাঁরা ক্ষমা পাবেন না।’
এদিকে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান ও সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হামলায় জড়িত সবাইকে মেরে ফেলুন।’ সন্দেহভাজন চার হামলাকারীর সবাইকে তাজিকিস্তানের নাগরিক বলে চিহ্নিত করেছে রুশ গণমাধ্যম।
মস্কোর পশ্চিম উপকণ্ঠে ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় প্রাণহানির বাইরেও ১৮০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৯৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পাঁচ লাখ রুবল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, আটক একজনের দাবি
মস্কোর ক্রোকাস সিটি কনসার্ট হলে হামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার এক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, হামলা চালানোর জন্য তাকে পাঁচ লাখ রুবল বা পাঁচ হাজার ৪০০ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো।
রুশ সংবাদ মাধ্যম আরটি’র এডিটর-ইন-চিফ মার্গারিটা সিমোনিয়ানের একটি টেলিগ্রাম পোস্টের বরাত দিয়ে রোববার এই তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস।
“টাকার জন্য আমি ক্রোকাসে মানুষের ওপর গুলি ছুঁড়েছি। আমাকে প্রায় ৫,০০,০০০ রুবল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো,” বলেছেন সন্দোহভাজন ওই ব্যক্তি।
তাসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য হামলায় আগেই ওই ব্যক্তিকে কার্ডে প্রতিশ্রুত অর্থের অর্ধেক অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছিল।
এছাড়া কাজ শেষ হওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিলো।
যদিও গ্রেফতারের আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের হাত থেকে পালাতে গিয়ে ওই ব্যক্তি কার্ডটি হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানানো হয়েছে তাসের প্রতিবেদনে।
তবে তাস বার্তা সংস্থার এই প্রতিবেদনের তথ্য অন্য কোন সূত্রে যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।
মস্কোতে হামলার ঘটনায় তিন বাবা–ছেলে গ্রেফতার
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর কনসার্টে হামলার ঘটনায় আরও তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা ওই হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়ির সাবেক মালিক, তাঁর ভাই ও বাবা। স্থানীয় সময় সোমবার বাসমনি ডিসট্রিক্ট কোর্ট তাঁদের ২২ মে পর্যন্ত বিচার-পূর্ব আটকাদেশ দেন।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- দিলোভার ইসলোমোভ (২৪), তাঁর ভাই আমিনচন ইসলোমোভ (৩৩) ও তাঁদের বাবা ইসরইল ইসলোমোভ (৬৩)। এর মধ্যে দিলোভার ওই গাড়ির সাবেক মালিক।
মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে বর্বরোচিত ওই হামলার সময় সাদা রঙের কালো ছাদওয়ালা একটি রেনো গাড়ির ছবি সিসি টিভিতে রেকর্ড হয়। পরে দেখা যায় ওই গাড়িতে করেই ইউক্রেন সীমান্তের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন হামলাকারী। পথে ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল।
পুলিশ দিলোভার ও তাঁর বাবা-ভাইয়ের বিরুদ্ধে হামলাকারীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ এনেছে। আদালতে দিলোভার নথি দাখিল করে জানিয়েছেন, তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে গাড়িটি বিক্রি করে দেন। তবে নথির তথ্য মতে, গাড়িটির বিমা এখনো দিলোভারের নামেই রয়েছে, নতুন করে কারও নামে করা হয়নি।
এর আগে গত শনিবার নোভায়া গেজেটা ইউরোপকে দিলোভার বলেছিলেন, তিনি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই গাড়ির ছবি দেখে হতভম্ব হয়ে যান। পরে দিলোভার নিজেই বিষয়টি পুলিশকে জানান বলে, তাঁর এক আত্মীয় দাবি করেছেন।
আদালতে দিলোভারের ভাই আমিনচন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তিনি এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নন।
দিলোভার ও তাঁর ভাই আমিনচন রাশিয়ার নাগরিক। তাঁরা দুজনই পেশায় গাড়িচালক। আর তাঁদের বাবার দেশটিতে বসবাস করার অনুমতিপত্র রয়েছে। তাঁদের বসবাস রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল তিভারে। দিলোভার ও তাঁর ভাই পেশায় ট্যাক্সিচালক।