:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং কোটার যৌক্তিক সংস্কারের এক দফা দাবিতে সারা দেশে আগামীকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপরও যদি দাবি মানা না হয় তবে সারা দেশে নতুন করে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, আজ পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের এনে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকার পরও বহিরাগতরা কীভাবে হামলা করে? সরকার সহিংসভাবে এই আন্দোলনকে দমন করতে চাইছে। কোটা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা বলতে চাই অবিলম্বে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্র সমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।
আগামীকালের আন্দোলনে সারা দেশের মানুষকে নেমে আসার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, এ আন্দোলন আর শুধু ছাত্রদের আন্দোলনে নেই। এ আন্দোলন দমন করার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে উসকানি দিয়ে আন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করা হয়েছে, তাই সাধারণ মানুষকে নেমে আসতে হবে। আমরা আগামীকাল বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করব। এরপর আমরা সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করব।
আমাদের আন্দোলন যুক্তিসম্মত; রাজাকার বলা হোক আর যাই বলা হোক- তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা জানি আমরা সবাই যুক্তিসংগত আন্দোলন করছি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। এখানে তৃতীয় পক্ষের ঢুকার কোনো সুযোগ নেই। সব সময় বলে আসছি এটা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি। এ দাবি মেনে নিলেই আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে।
তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আজকে হলে হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যে সব হলের ছাত্রলীগ নেতারা আমাদের ওপর আঘাত করেছে। আমাদের বোনের ওপর আঘাত করেছে তাদের কিন্তু হলে ঢুকতে দিবেন না। এ হল শিক্ষার্থীদের, এখানে কোনো বহিরাগত ঢুকতে পারবে না। হল নেতারা যেন কোনোভাবে হলে ঢুকতে না পারে।
এ সময় কোটা আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, সারা দেশে নির্মমভাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হলো। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টর আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
রোববার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার! স্বৈরাচার!!।
এক পর্যায়ে গতকাল রোববার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা।
রোববার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।