চট্টগ্রামে বাবলা হত্যাকাণ্ডের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৬

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের আলোচিত সারোয়ার হোসেন বাবলা হত্যাকাণ্ড এবং চালিতাতলীতে অটোচালক ইদ্রিসকে গুলি করে জখমের ঘটনায় পৃথক তিন অভিযানে ৬ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফফর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, চালিতাতলী এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাসহ রাউজান এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি ও সংঘর্ষের মূল হোতা ইশতিয়াক চৌধুরী প্রকাশ অভিসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব পৃথক এ অভিযান চালিয়েছে বলে জানান তিনি। 

র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সারোয়ার হোসেন বাবলা হত্যা মামলার আসামি মো. আলাউদ্দিন ও মো. হেলালকে (৪০), চট্টগ্রাম মহানগর চান্দগাঁও থানাধীন হাজিরপুল এলাকায় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 
 
রিক্সাচালক মো. ইদ্রিসকে গুলি করে আহত করা সন্ত্রাসী মো. আরমান আলী রাজ চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন রউফাবাদ আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

এদিকে বিএনপির নেতা এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে অস্ত্র উচিয়ে সন্ত্রাসী সরওয়ার বাবলাকে গুলি বর্ষণকারী ইসতিয়াক চৌধুরী অভি (৩৮) ও মো.  জনি (৩৮) এবং মাহমুদুল হক জ্যাকিকে (৩৫) গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব। কালো পলিথিনে মোড়ানো ১টি বিদেশি পিস্তল ও ম্যাগাজিসহ ৪ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। মহানগরীর চকবাজার থানাধীন সিরাজউদ্দৌলা রোডস্থ চন্দনপুরা ইঞ্জিনিয়ার শাহাজাহানের বিল্ডিং থেকে অস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।      

গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন এলাকায় চট্টগ্রাম–৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জনসংযোগের ভিতরে প্রবেশ করে সরওয়ার হোসেন বাবলার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় এরশাদ উল্লাহসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হন।

উক্ত ঘটনায় উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ সুমন, ইউনিয়ন কৃষক দলের সহ-সভাপতি মো.  ইসমাইল, শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম চৌধুরী, যুবদলের সহসভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ সোহেল গুলিবৃদ্ধ হয়। 

বাবলাকে হত্যার ঘটনায় ৭ জনের নামে মামলা

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে জনসংযোগে গুলি করে সরোয়ার হোসেন বাবলাকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়। 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে নিহত সরোয়ারের বাবা আবদুল কাদের বাদী হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় এ মামলা দায়ের করেন। 

মামলায় নামোল্লেখ করা আসামিরা হলেন—সাজ্জাদ আলী, মোহাম্মদ রায়হান, বোরহান উদ্দিন, নেজাম উদ্দিন, আলাউদ্দিন, মোবারক হোসেন ওরফে ইমন এবং হেলাল ওরফে মাছ হেলাল। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর ইসলাম।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী দীর্ঘদিন ধরে সরোয়ার হোসেন বাবলাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ গত রোববার তিনি সরোয়ারকে ‘সময় শেষ’ বলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে অংশ নেন সরোয়ার। এসময় পেছন থেকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। সাজ্জাদের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

পুলিশ জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় নগরের চালিতাতলী এলাকায় বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগ চলাকালে গুলিতে সরোয়ারসহ পাঁচজন আহত হন। এরশাদ উল্লাহও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। নিহত সরোয়ারের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় সাজ্জাদ আলীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সরোয়ার। ২০১৫ সালে তিনি আলাদা গ্রুপ গঠন করলে তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এর আগে চলতি বছরের ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে গুলি চালানোর ঘটনায় দুজন নিহত হন। তদন্তে জানা যায়, মূল টার্গেট ছিলেন সরোয়ার হোসেন বাবলা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *