৮০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

যুক্তরাজ্যের ৮০০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন র‌্যাচেল রিভস। তাঁর নাম ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। যুক্তরাজ্যে অর্থমন্ত্রীর পদকে ‘চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার’ও বলা হয়।

ব্রিটেনে চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকারের পদটি গত ৮০০ বছর ধরে থাকলেও এতদিন সেখানে দেখা যায়নি কোনো নারীকে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর কিংবা ট্রেজারি বিভাগের ফাস্ট পার্মানেন্ট সেক্রেটারির পদের দায়িত্বও এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে দেওয়া হয়নি।

রিভস মনে করেন, দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ববোধের জায়গাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

রিভস নারী ও পুরুষের মধ্যকার বিদ্যমান বেতনবৈষম্য দূর করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেক্ষেত্রে বর্তমানে তিনি দেশটির কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৪.৩ শতাংশ জেন্ডার পে গ্যাপের সমস্যাটি সমাধান করতে চান। 

শিক্ষাজীবন থেকেই লেবার পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলেন যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী র‌্যাচেল রিভস। ২০১০ সালে প্রথমবার এমপি হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি। ৪৫ বছরের এই রাজনীতিক ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে কাজ করেছেন। ছায়ামন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব সামলেছেন একাধিকবার। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিলেন জ্বালানি ও শিল্প কমিটির প্রধান। কেইর স্টারমার লেবার প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন র‌্যাচেল। অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করেছেন র‌্যাচেল রিভস। তিনি বলেছেন, রক্ষণশীল সরকার একটি ক্ষয়প্রাপ্ত অর্থনীতি রেখে গিয়েছে, যা নতুন সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

স্টারমারের ২২ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ১১ নারী

ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তার ২২ সদস্যবিশিষ্ট এই মন্ত্রিসভায় ১১ জনই নারীকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যা দেশটির ইতিহাসে রেকর্ড। 

কিয়ার স্টারমার নিজের কাছে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়া অন্য কোনো দায়িত্ব রাখেননি। তার মন্ত্রিসভার উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অ্যাঞ্জেলা রেইনার। অর্থমন্ত্রী তথা চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন র‍্যাচেল রিভস।

অর্থ মন্ত্রণালয়, উপপ্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পেয়েছেন একজন নারী। তিনি হলেন ইভেট কুপার। এর আগে ঋষি সুনাকের সরকারেও এক নারী সুয়েলা ব্রেভারম্যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

নতুন মন্ত্রিসভায় ব্রিটিশ বিচারমন্ত্রী হয়েছেন শাবানা মাহমুদ। ব্রিটেনের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী হিসেবে তিনি এ দায়িত্ব পেয়েছেন। তার আগে প্রথম নারী হিসেবে এই মন্ত্রণালয় সামলেছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস।

ব্রিটিশ শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছেন এক নারী; ব্রিজেট ফিলিপসন। এ ছাড়া শ্রম ও পেনশনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন লিজ কিনডাল এবং পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন লুইস হেই। 

স্টারমারের মন্ত্রিসভায় লিসা ন্যান্ডি পেয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তথা হাউস অব কমনস-বিষয়ক মন্ত্রী হয়েছেন লুসি পাওয়েল। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডস-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও হয়েছেন এক নারী; ব্যারনেস স্মিথ অব ব্যাসিলডন। এ ছাড়া জো স্টিভেনস দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়েলস-বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে। 

নতুন সরকারে অ্যাঞ্জেলা রায়নারকে উপপ্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ ডেভিড লামি।

এছাড়া যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন ইভেত্তে কুপার। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হ্যালি, শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন ব্রিজেত ফিলিপসন, এড মিলিব্যান্ড জ্বালানিমন্ত্রী, শাবানা মাহমুদ বিচারমন্ত্রী, জোনাথন রেনল্ড বাণিজ্যমন্ত্রী, লিজ কেন্ডাল শ্রম ও পেনশন, স্টিভ রিড পরিবেশমন্ত্রী, পিটার কাইলি বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি–বিষয়কমন্ত্রী, লিসা নন্দী সংস্কৃতি–বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়েস স্ট্রিটিং, পরিবেশ মন্ত্রী লুইস হাইগ এবং পরিবেশ মন্ত্রী হয়েছেন স্টিভ রিড। 

বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবি হয়েছে। পরাজয় মেনে নিয়েছেন সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি পেয়েছে ৪১২টি আসন, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১২১টি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ৭১টি আসনে জয় পেয়েছে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন অন্তত ৩২৬টি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *