■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া হত্যার নেপথ্যে ধর্ষণচেষ্টা মূল কারণ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্যমতে, নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম জান্নাতি দম্পতিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বাসায় নিয়ে অসদাচরণ ও নাজিমের অনুপস্থিতিতে আপত্তিকর আচরণ ও স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন সাইফুর রহমান।
গত রোববার (৯ মার্চ) রাতে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা করলে তার স্বামী প্রতিবাদ করেন, এসময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে দা দিয়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান ওই দম্পতি। ১১ মার্চ (মঙ্গলবার) ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার দম্পতি নাজিম হোসেন (২১) ও রুপা বেগম জান্নাতি (২৩) এর কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়।
নিহতের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো দা, একটি ধারালো চাকু ও রক্ত মাখা জামা-কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ১০ মার্চ রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার ছয়তলা ফ্ল্যাটে খুন হন। এ খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভুঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় ১১ মার্চ একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে নিহতের ভাই উল্লেখ করেন, নিহত সাইফুর উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় তার স্ত্রীর পৈত্রিক আড়াই শতক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গত ৩-৪ মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। যেখানে ঘটনাস্থল তার সামনেই এই জায়গাটি।
উত্তরার ডিসি মহিদুল ইসলাম জানান, রমজানের আগের দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমান ভুঁইয়ার সঙ্গে গ্রেফতার মো. নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম জান্নাতির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সাইফুর তার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন দম্পতিকে। একপর্যায়ে সাইফুর রহমান রুপাকে তার ফ্ল্যাটে আটকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করে। হত্যাকাণ্ডের রাতে এক বেডে ছিলেন নিহত সাইফুর রহমান ও দম্পতি রুপা ও নাজিম।
তিনি আরও বলেন, সেই রাতে নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে সাইফুর রহমান রূপাকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে নাজিম ঘুম থেকে জেগে গেলে রান্নাঘর থেকে দা এনে সাইফুর রহমানকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দম্পতি এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন।
মেয়েটিকে ধর্ষণচেষ্টার কারণে দম্পতি সাইফুর রহমানকে হত্যা করেছে মামলাটি কোন পর্যায়ে যাবে। এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবে এটি হত্যা মামলা। আদালতে মামলাটি যখন ট্রায়াল হবে তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যে পরবর্তীতে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
এর আগে, মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া হত্যা মামলায় গ্রেফতার দম্পতি রুপা বেগম জান্নাতি ও নাজিম হোসেন দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বুধবার (১২ মার্চ) তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তারা ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরখান থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুল হাসান তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফা জেরিনের আদালত রুপার এবং আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলমের আদালত নাজিমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়।