■ মাহমুদুল হাসান পাভেল ■
মদের নেশায় চুর হয়ে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান ট্রিগার সেদিন শুধু এই মানুষটিকে না, এতদিনে বাংলাদেশ নামক এই রাস্ট্র একটা উন্নত দেশ হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনাকে হত্যা করেছিল। থেমে গিয়েছিল আমাদের অগ্রযাত্রা। যেই হোঁচট আমরা আজো কাটাতে পারিনি।
সেনাপ্রধানের পদ নিয়ে মঞ্জুর-এরশাদ দ্বন্দ্বে জিয়া হত্যাকান্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড কে ছিল? মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর না সেনাপ্রধান এরশাদ? মঞ্জু বিনা বিচারে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল বিধায় অনেকেই হয়তো মঞ্জুরের প্রতি সহানুভূতি ফিল করে। আমি করিনা। কারণ হত্যাকান্ডের রাতের পরের সকালে হত্যাকারীদের এরেস্ট না করে, মঞ্জু পুরো কিলিং গ্যাংকে সাথে নিয়ে অভ্যুথান করে জিয়া হত্যাকান্ডকে লেজিটিমাইস করতে চেয়েছিল, কিলিং মিশনে খোদ মঞ্জুর আপন ভাগিনা মেজর মাহবুবও ছিলো।
এরশাদ মূল হত্যাকান্ডের বিচার না করে অভ্যুথান নিয়ন্ত্রনের ডামাডোলে কিলিং মিশন আর মঞ্জুর অভ্যুথান চেস্টায় জড়িত অনেককে হত্যা করিয়ে ফেলে, বাকিদের সেনা অভ্যুত্থান মামলায় ফাঁসিতে ঝুলায়। এদের মধ্যে কিলিং মিশনের অনেকেই ছিলো। তাই কিলিং মিশনের পেছনের মাস্টারমাইন্ড, সেদিন ওরা সবাই কি আসলে হত্যা করতেই গিয়েছিল না সার্কিট হাউজে জিয়ার কাছে নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে গিয়েছিল? ঘটনার কুশিলবরা কেউ বেচে না থাকাতে আজকের যুগে তদন্ত করা টাফ।
তবে বেনিফেশিয়ারি এরশাদ। আর সেই কালো রাতের কয়েকদিন আগে ট্রিগার দাবিয়ে দেয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান সেনাসদরে এরশাদের সাথে দেখা করেছিল অনেকেই সাক্ষ্য দিয়েছিল পরবর্তীতে। সে এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছিল। পরবর্তীতে বেগম জিয়া রাস্ট্রক্ষমতায় এসে এরশাদকে দূর্নীতি মামলায় জেলে পুরে দেওয়া থেকে আন্দাজ করা যায়, বেগম জিয়া এরশাদকেই সন্দেহ করতো।
৮১ এর ৩০ মে রাত থেকে পরবর্তী দুই তিন দিনে এত দ্রুত পালটা ক্যু, ক্যু নিয়ন্ত্রণ পাল্টাপাল্টি খুনাখুনিতে মুল খুনী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমানসহ কিলিং মিশনের অনেকেই মারা যাওয়াতে বেগম জিয়ার পক্ষেও এই হত্যাকান্ড নিয়ে আবার নতুন করে বিচার বসানো কঠিন ছিলো। কারণ এতদিন পর হয়তো অনেক নিরাপরাধ ব্যাক্তি আবারও ফেঁসে যেত। বেগম জিয়াকে যেভাবে আমরা জানি, এটা পরিস্কার ব্যাক্তিগত ক্ষোভ মেটানোর চাইতে কেউ যেন অবিচারের স্বীকার না হয় এটাকেই উনি প্রায়োরিটি দিয়েছিলেন।
কারণ মূল কুশিলবরা তখনই মারা গেছে।
মুজিব হত্যাকাণ্ড আর জিয়া হত্যাকান্ডের আফটার রিয়েকশান সেম ছিলোনা। মুজিব হত্যাকান্ডের পর হত্যাকারীরা বীরের বেশে পাবলিকের সামনে এসে বলেছিল আমরাই হত্যাকারী, এবং তারা সেলিব্রেটির মর্যাদা পেয়েছিল তখন জনগণের কাছে। তাই সারাদেশ সহ ইতিহাস পরিস্কারভাবে জানতো কারা কিলিং মিশনে ছিলো।
আর জিয়া হত্যাকান্ডের পর ঘটলো উলটো ঘটনা। হত্যাকারীরা জনধিকৃত হয়েছিল, ফলাফল বুক ফুলিয়ে কেউ হত্যাকাণ্ডের দ্বায় স্বীকার করেনি। উলটো মঞ্জুকে নেতা বানিয়ে জিয়া হত্যাকান্ডকে কিছুটা লেজিটিমাইস করতে আর জিয়া হত্যায় জনগণের দৃষ্টি সরাতে এরশাদের বিরুদ্ধে ক্যু করে। আর চান্স নেয় এরশাদ, মঞ্জুরের সাথে ক্যু এ জড়িত সবাইকে জিয়া হত্যাকারী বানিয়ে হত্যা করে নয়তো পরে ফাঁসিতে ঝুলায়। এদের মধ্যে কয়েকজন নিশ্চিত পার্সন ছাড়া বাকিদের মধ্যে কারা কিলিং মিশনে ছিলো আর কারা ছিলোনা এটা আর পরিস্কারভাবে জানা সম্ভব হয়না।
ইতিহাসের ওই দুই হত্যাকাণ্ড পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে একটা বিষয় ক্লিয়ার ছিলো। মুজিব হত্যা জনগণ সেলিব্রেট করেছিল, কারণ মুজিব ছিলো স্বৈরাচার। আর জিয়া হত্যা জনগণ কর্তৃক ধিকৃত হয়েছিল। কারণ জিয়া ছিলো জনতার প্রেসিডেন্ট – মিঃ বাংলাদেশ।
মিঃ বাংলাদেশ, শাহাদাতবার্ষিকীতে আপনার প্রতি স্বশ্রদ্ধ সালাম। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুক। আমিন।