■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে যোগ দেন।
বিএনপিতে যোগ দিতে পেরে গর্ববোধ করার কথা জানান রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি দুবার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে। একবার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান করেছিলেন, আরেকবার খালেদা জিয়া। এটা বিএনপির একটা ঐতিহাসিক ভূমিকা। এমন উদাহরণ অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। এসব কারণে তিনি বিএনপির প্রতি আকৃষ্ট হন। জিয়াউর রহমানকে তাঁর আদর্শ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রেজা কিবরিয়া বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব দেশের নতুন প্রজন্মের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। বিএনপির আগের ভিশন নেই, অনেক কিছু বদলে গেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন যেই নেতৃত্বে আছে এবং সিনিয়র নেতারা যারা আছেন, তারা আমাদের নতুন প্রজন্মের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। তাদের যে ভিশন দেশের জন্যে এটা আগের ভিশন না। অনেক কিছু বদলে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার যে রক্ত এটা কোনও কোয়ালিটির আপনারা যদি চিন্তা করেন– তার বাপ কী ছিলেন এবং মা কী আছেন এটা ইনক্রেডিবল। বাংলাদেশে আর কারও ওই কোয়ালিটির ব্ল্যাড লাইন নেই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই তাকে সাহায্য করবো। তিনি এ মুহূর্তে বিদেশে আছেন, আমাদের মানুষের কাছে নেই একদিকে এটি দুঃখজনক। তবে আরেকদিক থেকে আমি এটাতে খুশি, তিনি বিদেশের সব কোয়ালিটি, সব প্রশাসনিক, সব জিনিসগুলি নিজে দেখছেন, শিখছেন এবং সেগুলো বাংলাদেশে আনবেন। আমি মনে করি, তার ইংল্যান্ডে থাকাও দেশের মানুষের জন্যে একটা লাভজনক জিনিস। তিনি অনেক কিছু নিয়ে আসবেন, এ দেশে যেটা আগে ছিল না।
রেজা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশটাকে উন্নত করতে এশিয়ার প্রথম তিন দেশের মধ্যে আনতে অসম্ভব কিছু না। আপনারা ভাবছেন, আমি কী রূপকথার মতো বলছি। এটা পরে দেখবেন। আমি ৩৫টা দেশে কাজ করেছি প্রায় ৪০ বছর। আমাদের দেশের মানুষের কোয়ালিটি ‘টপ ক্লাস’। এই মানুষগুলোকে দিয়ে একটা প্রথম সারির দেশ তৈরি করা যাবে।
তিনি বলেন, বিএনপিকে এই সুযোগটা যদি ভোটাররা দেন তাহলে আপনারা দেখবেন এ দেশের জন্যে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তারা কী করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আশা করি, আমার এলাকায় নবীগঞ্জ-বাহুবল সেখানে আমার কাজ করার একটা সুবিধা হবে এবং যদি ওনারা মনে করেন জাতীয় কোনও জায়গায় আমাকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার। আমি চাই, দেশের জন্য কাজ করতে। আমি খুব ভালো চাকরি ছেড়ে এসেছি। আইএমএফের চাকরি লাভজনক একটা চাকরি। সেই চাকরি ছেড়ে আমি আসছি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে। এটা ছিল আমার বাবার স্বপ্ন। আশা করি, তা পূরণ করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাঁরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত যে রেজা কিবরিয়া আজ তাঁদের মাঝে এসে তাঁদের দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রেজা কিবরিয়াকে তাঁদের দলে স্বাগত জানাচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাষ্ট্রকাঠামোর প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য মেধাবী নেতৃত্ব ও প্রতিভাবান মানুষ প্রয়োজন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রেজা কিবরিয়ার বিএনপির পতাকাতলে আসাকে তাঁর দল স্বাগত জানাচ্ছে। অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। আগামী সংসদ নির্বাচনে জন্য গত মাসের শুরুতে বিএনপি যে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে, সেখানে হবিগঞ্জ-১ আসনটি ফাঁকা রাখা হয়।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে একই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। এর আগে তিনি গণফোরামে যোগ দেন। পরে দলটির সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর রেজা কিবরিয়াকে কেন্দ্র করে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। পরে তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদ গঠন করেন। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হন। সেখানেও তাঁকে কেন্দ্র করে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এরপর তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। এবার তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেন।
রেজা কিবরিয়া ১৯৫৭ সালের ৬ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানে সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমায় অবস্থিত জালালসাপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতিতে স্নাতক, কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর অর্জন করার পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমফিল ও ডিফিল অর্জন করেন।
এরপর তিনি ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে যোগ দেন এবং ১৯৯৩ সালের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাপুয়া নিউগিনি সরকারের রাজস্ব বিভাগের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। এরপর ৮ বছরের জন্য তিনি পিডিপি অস্ট্রেলিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পূর্ব-আফ্রিকা আঞ্চলিক কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৬ সাল থেকে ২ বছরের জন্য তিনি কম্বোডিয়া সরকারের অর্থনীতি ও অর্থসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ম্যাক্রো ফিসক্যাল উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি ইন্টিগ্রো হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন।
