ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে গ্রেফতার রিকশাচালক কারামুক্ত

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে গ্রেফতার রিকশাচালক আজিজুর রহমান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সোমবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান বলে নিশ্চিত করেছে কারাগার কর্তৃপক্ষ।

রোববার রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে জামিন মঞ্জুর করে আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেন। আজিজুর রহমানের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, ধানমন্ডি থানায় করা পুরোনো হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেফতার তাঁর মক্কেল রিকশাচালক আজিজুরের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত শুনানি নিয়ে এক হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গ্রেফতারের খবরে তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। একজন দিনমজুর রিকশাচালকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে তারা হতবাক। গ্রেফতারের পর থেকে রিকশাচালকের পরিবার চরম আর্থিক ও মানসিক চাপে ছিলেন। জামিনে মুক্তির পর পরিবারের সদস্যরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, মামলার তদন্ত এখনো চলমান। জামিনে মুক্ত থাকাকালীন তাকে আদালতের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, একটি মামলায় গতকাল রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান। আদালত তাঁকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে ১৫ আগস্ট দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ভেঙে দেওয়া বাড়িতে যান আজিজুর রহমান। তিনি নিজেকে রিকশাচালক বলে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ফুল দিতে এসেছেন। এ সময় কয়েকজন তাঁকে মারধর করলে পুলিশ তাঁকে তাকে আটক রাখার আবেদনে বলা হয়, মামলার ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এবং বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সন্দিগ্ধ আসামি আজিজুর রহমান মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, এই আসামি ধানমন্ডি ৩২ এ সাধারণ জণগণের দ্বারা আটক হওয়ায় সময় ধস্তাধস্তিতে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হন। মামলা তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জেল-হাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।

মামলার অভিযোগ বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট ধানমন্ডি থানার নিউমার্কেট থেকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন মো. আরিফুল ইসলাম। ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটায় আসামিরা গুলি, পেট্রোল বোমা ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। গুলি ভুক্তভোগীর পিঠ দিয়ে ঢুকে গেলে তাৎক্ষণিক পড়ে যান। পরে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে দুই মাস চিকিৎসা শেষ সুস্থ হন। এ ঘটনায় এ বছরের ২ এপ্রিল ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ভুক্তভোগী আরিফুল।

এদিকে, রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে কীসের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তলব করা হয়েছে।

একই সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। রোববার অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।  

বিবৃতিতে বলা হয়, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ থেকে আটক রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে কীসের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

দায়েরকৃত মামলায় আজিজুর রহমানের সম্পৃক্ততার তদন্ত সম্পন্ন করে সম্প্রতি সংশোধিত সিআরপিসির ১৭৩(এ) ধারা মোতাবেক অতিসত্বর প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *