আজিমপুরে ডাকাতির সময় শিশু অপহরণের নেপথ্যে

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

রাজধানীর আজিমপুরে ডাকাতির সময় শিশু আরিশা জান্নাত জাইফার অপহরণের সাথে জড়িত ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ভুক্তভোগী শিশুর বাবা আবু জাফরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শাপলা ডাকাতি ও অপহরণের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস । প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ওই নারী ডাকাতি ও অপহরণের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে।

মুনীম ফেরদৌস বলেন, শিশু জাইফার মায়ের সঙ্গে সম্প্রতি সম্পর্ক গড়ে তোলে অপহরণ চক্রের প্রধান ফাতেমা আক্তার শাপলা। শিশুটির মা ফারজানা আক্তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত। তিনি মন্ত্রণালয়ের বাসে যাতায়াতকালে কৌশলে ওই বাসে ওঠেন অপহরণকারী ফাতেমা। নানানভাবে অপহৃতের মায়ের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে শিশুর মায়ের সঙ্গে সাবলেটে একই বাড়ি থাকার পরিকল্পনাও করেন তারা। ঘটনার দিন আজিমপুরে ভুক্তভোগী শিশুটির বাড়িতে প্রবেশ করেন অপহরণকারী ফাতেমা আক্তার। এসময় কৌশলে ভুক্তভোগীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এরপর ফাতেমার তিনজন সহযোগী ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে থাকা নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, প্রায় সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়। এরপর শিশু মেয়ে আরিশা জান্নাতকে অপহরণ করে আনা হয়। রাখা হয় অপহৃতের আদাবর নবীনগর হাউজিংয়ে। সেখান থেকে গতকাল রাতে র‍্যাব শিশুটিকে উদ্ধার করে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অপহরণের দুই সপ্তাহে আগে শিশুর মায়ের সাথে অফিসে যাতায়াত করার সময় শাপলার পরিচয় হয়। ওই সময় শাপলা তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেন। শাপলা আরো জানায় সে অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করে বলে জানান। শাপলা শিশুর মা ফারজানা আক্তারকে আরো জানান, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভাল রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে বাসায় ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুকে দেখভালও করতে পারবেন। মেয়ের দেখাশুনার কথা চিন্তা করে তাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দেয়ার জন্য রাজি হন ফারজানা।

তিনি আরও জানান, গত ১৪ নভেম্বর বিকালে শাপলা বাসায় আসেন এবং ২০০০ টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে দিয়ে বাসায় রাত্রিযাপন করেন। পরের দিন সকালে সে জানায় গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে। সকাল সাড়ে ৮টায় তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে ৩ ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শিশুর মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এসময় তারা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে শিশু জাইফাকে নিয়ে চলে আসে এবং তার সহযোগিরা গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে জাইফাকে উদ্ধার করে শাপলাকে গ্রেফতার করা হয়। তারা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তারা শিশুটির পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি।

গ্রেফতার ফাতেমা আক্তার শাপলা একজন গৃহিনী। সে ২০১০ সালে তার পরিবারের সাথে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করে। সে ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে রাজধানীর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তীতে রাজধানীর অপর একটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেনি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং বিগত ৩-৪ মাস পূর্বে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর নিজস্ব ফ্লাটে বসবাস শুরু করে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *