■ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা পোষ্য কোটা পুনর্বহাল এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অবস্থান নিয়ে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে রাতেই শিক্ষক ও কর্মকর্তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ তাঁরা কর্মবিরতিতে নেমেছেন।
এ বিষয়ে রাবি অফিসার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গতকাল আমাদের সহকর্মীদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
তবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের এই কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের কার্যক্রম। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা রাকসু নির্বাচন নিয়ে খুবই আশাবাদী এবং আমরা চাই নির্বাচন হোক। এ কারণেই রাকসুর সব কাজ আমরা কর্মসূচির বাইরে রেখেছি।’
এদিকে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবি এবং চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
এ সময় অফিসার্স সমিতির কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা বলেন, গতকালকের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। যারা বহিরাগত তাদেরকে আনইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি শাস্তি নিশ্চিত করা না হয় আগামীকাল থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছু শাটডাউন করে দেব।
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তার গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তার বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তার বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। তার সঙ্গে প্রক্টর মাহবুবর রহমানও ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিক থেকে জুবেরী ভবনে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার কর্মবিরতির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আবদুল আলিম। সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও কর্মবিরতিতে থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।
এর আগে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবন ছেড়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে তারা বাসভবনের ফটক এবং প্যারিস রোড ত্যাগ করেন। এর আগে, আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। আজ রোববার এ বিষয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে শনিবার রাত ১টার দিকে একটি পোস্টের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত স্থগিতের কথা জানানো হয়। পোস্টে বলা হয়েছে, রোববার জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। তারা উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। পরে রাত গভীর হওয়ায় ধীরে ধীরে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, রাত আড়াইটার পর থেকে শিক্ষার্থীরা প্যারিস রোড এবং উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে সবাই চলে যাওয়ার পর আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও স্থান ত্যাগ করেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রিয়াদ খান রাত সোয়া ৩টার দিকে প্যারিস রোড ত্যাগ করার সময় সমকালকে বলেন, ‘প্রশাসন থেকে আর কোনো সাড়া না পাওয়ায় আমরা চলে যাচ্ছি। সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
আন্দোলনরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ বলেন, ‘রাত গভীর হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে চলে যান। আজ প্রশাসন এ বিষয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করব।’