■ রাঙামাটি প্রতিনিধি ■
রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী এখনও কাজ করছে।
পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের জেরে গত শুক্রবার বেলা ১টার দিকে পৌরসভায় এই বিধিনিষেধ জারি করেছিল জেলা প্রশাসন।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত দুদিনের চেয়ে আজ রাঙামাটির পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সমানভাবে কাজ করছে। আশা করছি, আর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। তাই আজ বেলা ১১টা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবে। আমরা সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব এবং পরে তাদের আর্থিক সহায়তা করা হবে।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর জোন কমান্ডারের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সহায়তার আশ্বাস দেন।
এদিকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হলেও অবরোধ এবং ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিকেলে সম্প্রীতি সভা রয়েছে। সেই সম্প্রীতি সভায় আলোচনার মাধ্যমে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
গত বুধবার খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্রে করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুর পর সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই দিন সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংঘর্ষের একপর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, আগুনে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকায় ১০২টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে পাহাড়িদের ৭৮টি ও বাঙালির সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে।
দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের জেরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় ৩ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২০ জন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।
রাঙামাটি শহরবাসিকে কোনো গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল।
অবরোধের কারণে সাজেক ভ্যালিতে বেড়াতে গিয়ে আটকা পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক।
এ বিষয়ে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার জানান, অবরোধের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় পর্যটকদের কোনও গাড়ি শনিবার ছাড়া হয়নি। সাজেকে আটকা পর্যটকরা সবাই নিরাপদে ও সুস্থ আছেন। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”