:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে এক নববধূ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ।
ধর্ষিত নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ জুন) মধ্যরাতে ওই নারী তার স্বামীকে নিয়ে খিলক্ষেতের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ফিরছিলেন। পথে ৬ থেকে ৭ ব্যক্তি তাদেরকে বনরূপা এলাকায় নিয়ে স্বামীকে আটকে রাখে ও নববধূকে ধর্ষণ করে। কৌশলে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে ঘটনাটি পুলিশকে জানান ওই নারীর স্বামী। শনিবার এ ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি কাশেমসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন– মূলহোতা সুমনসহ তার সহযোগী পার্থ, হিমেল, রবিন, টুটুল, হৃদয় ও নুরু।
পুলিশ জানায়, ওই নারীকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে বনরূপা এলাকার ঝোপঝাড়ের মধ্যে নিয়ে মারধর করে এবং ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এক পর্যায়ে তারা ভিকটিমের স্বামীকে ছেড়ে দেয় মুক্তিপণের টাকা আনার জন্য। ভিকটিমের স্বামী ওই স্থান ত্যাগ করে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সহায়তা চান।
এরমধ্যে আসামিরা ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে মারধর করে ও শারীরিক নির্যাতন করে। ভিকটিম তাদেরকে কাঁদতে কাঁদতে না মারার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। আসামিরা ভিকটিমের আর্তনাদে কর্ণপাত না করে তার উপর অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামিরা ভিকটিমকে ধর্ষণ করে।
পরে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। এসি ক্যান্টনমেন্ট জোন শেখ মুত্তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে খিলক্ষেত থানার কয়েকটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করে।
শেখ মুত্তাজুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী নারী শুক্রবার সন্ধ্যায় তার স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে বের হন। তারা খিলক্ষেত থানা এলাকার ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের বনরূপা এলাকায় গেলে সেখানে আবুল কাশেম ওরফে সুমন নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সাতজনের দল তাদের অপহরণ করে। ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামীকে বনরূপা এলাকার ঝোপঝাড়ের ভেতরে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্বামীর কাছে মুক্তিপণ দাবি করে তারা। মুক্তিপণের টাকা আনার জন্য স্বামীকে ছেড়ে দিলে তিনি বেরিয়ে এসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন।
এসি শেখ মুত্তাজুল ইসলাম আরও বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বনরূপা এলাকায় যায়। পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা ঝোপঝাড়ের ভেতরে বারবার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। ভোর চারটার দিকে পুলিশ সেখান থেকে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি রিফাত রহমান শামীম বলেন, শুক্রবার রাতে ঘটনাটি জানানোর পরপরই অভিযান শুরু হয়। গ্রেফতারকৃতরা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। জড়িত একজন ওই নারীর পূর্ব পরিচিত।
ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তা মুত্তাজুল ইসলাম বলেন, ওই নারী পুলিশকে জানিয়েছেন, চারজন দুর্বৃত্ত তাঁকে ধর্ষণ করেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কাশেম জানান, ওই নারীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল; তাঁকে বিয়ে না করায় পরিকল্পিতভাবে দলবল নিয়ে ওই নারীকে তুলে এনে ধর্ষণ করা হয়েছে।
ওই নারীর স্বামী বলেন, খুব দ্রুত ঘটনাটি ঘটে গেছে। প্রথমে জানতে চায় আমাদের সঙ্গে কী রয়েছে। মোবাইল সেট নিয়ে সিম খুলে দেয়। এক পর্যায়ে মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর বললাম, মোবাইল ফোনসেট না পেলে কীভাবে যোগাযোগ করে টাকা দেব।
তিনি বলেন, এত রাতে বিমানবন্দর এলাকায় না যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে বারবার নিষেধ করেছিলাম। সেখানে ছিনতাইকারীসহ অনেক অপরাধীদের দৌরাত্ম্য– এটাও বলেছিলাম। যেটা আশঙ্কা করেছি তার চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। তারা জিম্মি করে প্রথমে প্রাণনাশের ভয় দেখায়। চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর স্ত্রীকে কোনোভাবে শান্ত করতে পারছি না। সে এখনও ভয়ের মধ্যে আছে।
তিনি আরও বলেন, হাতের মেহেদির রং মোছার আগেই আমার স্ত্রী এমন ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হলো। যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি সাজ্জাদ ইবনে রায়হান বলেন, গ্রেফতার ধর্ষকরা নেশার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। আগে থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেফতার সবাইকে আজ আদালতে তোলা হবে।