:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারাদেশে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দু’জন ও রংপুরের একজন রয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা প্রথমে জানিয়েছিল, পবিত্র আশুরার কারণে বুধবার কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। তবে রাতে তারা ঘোষণা দেয়, পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলা ও গুলিতে শহীদদের জন্য সারাদেশে গায়েবানা জানাযা ও কফিন মিছিল করবেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। এরমধ্যে দুপুর ২ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাযা ও কফিন মিছিল’ অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ তথ্য জানান।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ (মঙ্গলবার) পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলা ও গুলিবর্ষণে শহিদ ভাইদের জন্য আগামীকাল বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর ২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় জেলায় গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল পালন করুন। ঢাকায় অবস্থানরত সবাই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সময় মতো চলে আসুন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভিসি চত্বর থেকে নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না করে চলে যান কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, আজকের মতো এখানে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি। আমরা আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেব। সেটি পরে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে চললেও ছাত্রলীগের হামলার পর সোমবার তা রূপ নেয় সহিংসতায়। হামলা-পাল্টা হামলা গুলি ও সংঘর্ষে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামেই মারা গেছেন তিনজন। এ ছাড়া ঢাকায় দুইজন ও রংপুরে একজন মারা গেছেন। এ অবস্থায় অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। একই সঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে সব শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাতে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সকল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদানের নিমিত্ত নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
গায়েবানা জানাজা করবে বিএনপি
কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে আজ বুধবার বাদ জোহর সারা দেশে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। যুগপৎভাবে ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ আজ
চলমান আন্দোলনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ বয়কটের ডাক, অবাঞ্ছিত ঘোষণা
চলমান আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বয়কটের ডাক দিচ্ছেন। সময় যত সামনে গড়াচ্ছে, এই বয়কটের ডাক তত জোরদার হচ্ছে।
ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই বয়কটের ডাক দেন।
এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের কক্ষ ভাঙচুর করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষে তল্লাশিও চালান।
চার জেলায় বিজিবি মোতায়ন
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী ও রংপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি টহল দিয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন সতর্ক প্রহরায়। রাত ১২টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় দলের সাত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। শতাধিক ককটেল এবং কয়েকটি দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে সকালে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ছাত্রদল সর্বাত্মকভাবে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পাশে রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে হলত্যাগের নির্দেশ। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
যেভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
সোমবার হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে দফায় দফায়। আওয়ামী সমর্থক ও কোটা সংস্কারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী– উভয় পক্ষের হাতে ছিল লাঠিসোটা ও দেশি অস্ত্রশস্ত্র। ছাত্রলীগের কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা যায়। বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে আহত এক যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মাথা ও মুখে জখমের চিহ্ন ছিল। পরে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে মধ্যরাতে পরিচয় শনাক্ত হয়। তাঁর নাম সবুজ আলী (২৪)। ওই যুবকের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী সদরে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতাল থেকে আহত আরেকজনকে ঢামেকে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়। যারা তাঁকে হাসপাতালে নিয়েছেন তাঁরা জানান, ওই তরুণ সিটি কলেজের সামনে আহত হন। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, পপুলার থেকে যে যুবককে ঢামেকে আনা হয়েছে, রাতে তাঁর পরিচয় শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। মো. শাহজাহান (২৪) নামে ওই যুবক স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কামরাঙ্গীরচর থাকতেন। তিনি পেশায় হকার।
শাহজাহানের মা আয়শা বেগম বলেন, নিউমার্কেটের বলাকা সিনেমা হলের সামনে পাপোশ বিক্রি করত আমার ছেলে। কীভাবে মারা গেছে, জানি না।
চট্টগ্রামে নিহত তিনজনের মধ্যে দু’জনের পরিচয় মিলেছে। তাঁরা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম আকরাম (২২)। ফারুক একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী। তাঁর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। নিহত অন্যজন ফয়সাল আহমেদ শান্ত। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া এলাকার বাসিন্দা। ফয়সাল আহমেদ শান্ত নগরের এমইএস কলেজের ছাত্র।
রংপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২২) নিহত হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন। সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ও সেখানে থাকা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীসহ আহত ১২৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আটজন ছাড়া বাকি সবাই প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল ছেড়েছেন।
সায়েন্স ল্যাব রণক্ষেত্র
কোটা সংস্কার দাবি ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সায়েন্স ল্যাবে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজসহ অন্তত আট কলেজের শিক্ষার্থীরা রড, লাঠিসোটা হাতে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ২টার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা রড, লোহার পাইপসহ লাঠিসোটা নিয়ে জড়ো হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় এলিফ্যান্ট রোডের কিছু ব্যবসায়ীকেও এতে যুক্ত হতে দেখা যায়। একপর্যায়ে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারীরা।
দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীরা এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের ধাওয়া করলে তারা পিছু হটেন। এর পর ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা পাল্টা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করতে থাকেন। ২টা ৪০ মিনিটে আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি অস্ত্র উঁচিয়ে পরপর তিন রাউন্ড গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দে শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবের দিকে চলে যান। ২টা ৫৫ মিনিটে আন্দোলনকারীরা এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থানকারীদের ফের ধাওয়া দেন। এ সময় একই ব্যক্তি আরও তিন রাউন্ড গুলি ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ফিরে যান সায়েন্স ল্যাবে। এদিকে ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের সঙ্গেও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় গুলির ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পর পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। রাত ৯টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিকেলে ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় একদল লোককে এক ব্যক্তিকে পেটাতে দেখেন তারা। পরে ওই ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিমকে ধাওয়া করেন শিক্ষার্থীরা। তিনি ধানমন্ডির ল্যাবএইডে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। ডাক্তার দেখিয়ে বের হলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে ধাওয়া করলে হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। এ সময় তাঁর গাড়িও আটকে দেওয়া হয়।
চানখাঁরপুলে চারজন গুলিবিদ্ধ
বিকেলে চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন পলক সানজিদ শুভ, অয়ন, সাফিন ও রাতুল। তাদের ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনের সড়ক পর্যন্ত সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। অবশ্য আগে থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আবদাল আজিজের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চানখাঁরপুল মোড়ে অবস্থান নেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর অবস্থান থেকে বিকেল ৫টার দিকে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সংঘর্ষের সময় তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আহত হন। আন্দোলনকারীরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে চানখাঁরপুল মোড়ে কাঠ-বাঁশ দিয়ে সড়কে আগুন ধরিয়ে দেন। কয়েকটি দোকানও ভাঙচুর করেন তারা।
সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের হামলায় আহত ৫ জন
সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালান। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন মেডিকেলের ছাত্রী আহত হন। এর পর আরও ফুঁসে ওঠেন আন্দোলনকারীরা। হামলাকারীদের বহিষ্কারের দাবি তুলে শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন কার্যালয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন রিপন, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আকাইদুল ইসলাম, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন অবস্থান করছিলেন। রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের ওই কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। ৮টা ৫ মিনিটে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা চলে যান।
জবিতে হামলায় ৪ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এতে জবির তিন ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জবির সহস্রাধিক শিক্ষার্থী লাঠিসোটা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে রায়সাহেব বাজার অতিক্রম করছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গুলিও চালায় তারা। এতে জবির ১৭ ব্যাচের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র অনিক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস জামান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৬ ব্যাচের নাসিম ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী হাসিব গুলিবিদ্ধ হন। তাদের ন্যাশনাল মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ঢামেক হাসাপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ছুরিকাঘাতে তায়াফ নামে জবির এক শিক্ষার্থী আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন।
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ বলেন, গুলিবিদ্ধ চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে গুলিবিদ্ধ দু’জনকে ঢামেক হাসপাতালে অপারেশন করা হয়েছে বলে জানায় প্রক্টরিয়াল বডি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা আহত শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি।
এদিকে জবি শাখার নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাবির টিএসসির উদ্দেশে দুপুরে চলে যান। এ সময় পুরান ঢাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে জবির সামনে শোডাউন দিতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা তাঁতীবাজারে অবস্থান নিলে সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।